বাকৃবি প্রতিনিধি: ঘোড়ার প্রাণঘাতী রোগ গ্ল্যান্ডার্স বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের কনফারেন্স রুমে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। এসময় সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল, মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান, সার্জারী ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: মোশাররফ উদ্দিন ভূঞাসহ ভেটেরিনারি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবং স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
সেমিনারে বক্তারা জানান, গ্ল্যান্ডার্স একটি অতিপ্রাচীন ও মারাত্মক ছোঁয়াচে জুনোটিক রোগ। এই রোগ ঘোড়া থেকে মানুষে সহজে ছড়াতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত হলে জ্বর, চামড়ায় মারাত্মক ক্ষত, সন্ধিস্থল ফুলে যাওয়া, শ্বাস কষ্ট, রোগা হয়ে যাওয়া, কাশি, নাক দিয়ে ঘন শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া ইত্যাদি দেখা যায়। তবে ঘোড়ায় এই রোগের জীবাণু দীর্ঘদিন সুপ্ত অবস্থায় রোগের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া অবস্থান করে রোগ ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে গ্ল্যান্ডার্সের উপস্থিতি নির্ণয় এবং কোন কোন ফ্যাক্টর এ রোগের ঝুঁকি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে তা জানার জন্য ২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত কর্ণেল পলাশ কুমার ভট্টাচার্য্য একটি গবেষণা কর্ম পরিচালনা করে আসছেন বলে সেমিনারে জানা যায়। ওই গবেষণার আওতায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম ও চট্টগ্রাম জেলায় প্রতিপালিত ৭৫৩ টি অশ্ব হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ সকল নমুনা বাকৃবির মেডিসিন বিভাগের ল্যাবরেটরি, জার্মানির ফ্রেডেরিখ লোফলর ইনস্টিটিউট (FLI) এবং ভারতের ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অফ ইকুয়াইন (NRCE) এ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এ কাজে ঐ প্রতিষ্ঠান দুটোর বিজ্ঞানী যথাক্রমে ড. হেনরিখ নইবার ও ড. হরিশংকর সিংহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সহায়তা প্রদান করেন।
গবেষক কর্ণেল পলাশ কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, “গবেষণার আওতায় পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, অশ্ব পালনে সরাসরি জড়িত বেশিরভাগ মানুষের এ রোগ সম্পর্কে ধারণা নেই। বিশেষত স্বল্প শিক্ষিত অশ্ব পালকগণের অধিকাংশই এ রোগ সম্পর্কে অবগত নন এবং এ বিষয়ে সচেতন নন। এমনকি কোন ছোঁয়াচে রোগ হলে যে সকল স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হয় সে সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল নন। এ রোগের জীবাণু যুদ্ধ ক্ষেত্রে বায়োলজিক্যাল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নজির আছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধ বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী এই জীবাণু ব্যবহার করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষ ও অশ্বের মৃত্যুর সম্ভাবনা ব্যাপক কেননা এ রোগের চিকিৎসা এখনও পর্যন্ত অপ্রতুল। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করত ৪/৫ বছর মেয়াদি মনিটরিং এবং সার্ভিল্যান্স কর্মসূচি গ্রহণ জরুরি। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে বড় পরিসরে এ রোগ নিয়ে আরও গবেষণা পরিচালনা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে গ্ল্যান্ডার্স প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি”।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গ্ল্যান্ডার্স রোগটি পশ্চিমা বিশ্ব থেকে নির্মূল হলেও এখনও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এ রোগের উপস্থিতি বিদ্যমান। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে এ রোগের প্রকোপ রয়েছে। এসকল দেশে ২০০৬ সাল থেকে এ রোগের পুনরুত্থান (Re-emergence) ঘটেছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে ৪০০০ কিলোমিটারের অধিক স্থল সীমান্ত রয়েছে যার অনেক স্থান সুরক্ষিত নয়। ফলে এ সীমান্ত এরিয়া দিয়ে প্রায়শই অননুমোদিতভাবে অশ্ব সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করে৷ ফলে প্রাণীর সাথে সাথে ঐ প্রাণীর রোগসমূহও দেশে চলে আসে। তাই এদেশের অশ্বের মধ্যে গ্ল্যান্ডার্সের উপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক। তবে ইতিপূর্বে বাংলাদেশে এ রোগের উপস্থিতি আছে কিনা তা নিয়ে কোন গবেষণাকর্ম পরিচালিত না হওয়ায় এ সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায়নি, যা শুধু প্রাণী স্বাস্থ্যই নয়, জন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে।
/আসিফ ইকবাল