বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হতাশ অধিকাংশ শিক্ষার্থী, যা বলছে জরিপ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সার্বিকদিক নিয়ে হতাশ বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পারছে না

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে হতাশ অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা-যা বলছে জরিপ
ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) সার্বিকদিক নিয়ে হতাশ বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পারছে না তাদের প্রত্যাশার জায়গা। সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটি কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

গত ১ অক্টোবর, ২০২৪ থেকে ৫ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ববি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিভিন্ন সংকট নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিমত’-শীর্ষক একটি গবেষণা জরিপ পরিচালনা করেন সংগঠনটি। জরিপটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ব্যাচ থেকে শুরু করে দ্বাদশ ব্যাচ পর্যন্ত মোট ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

জরিপটিতে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে সেগুলোর প্রায় সবকটিতেই নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন জরিপ করা সংগঠনটি। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক দিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশার দিকটি ফুটে উঠেছে। জরিপটিতে শিক্ষা ও গবেষণার মান ও সুযোগ সুবিধা, শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের সুসম্পর্ক, লাইব্রেরির সুযোগ সুবিধা, শ্রেণীকক্ষ, আবাসন ব্যবস্থা, ইন্টারনেট পরিসেবা, ক্যাম্পাসে চিকিৎসা সেবা,পরিবহন ব্যবস্থা ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতুলতা ও মান নিয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তা সহ আরো নানান দিক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। জরিপটিতে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে ২৩ টি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।
যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা সংশ্লিষ্ট জরিপের প্রশ্নগুলোর প্রায় সবকটিতেই নেতিবাচক ফলাফল এসেছে বলে জানিয়েছেন জরিপকারী সংগঠনটি। জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই( ৫০% এরও বেশি) এইসব বিষয়ে নেতিবাচক মত প্রকাশ করেন অর্থাৎ তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বিষয়গুলো নিয়ে হতাশ ও অসন্তুষ্ট।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রত্যাশা ও হতাশা নিয়ে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসমিয়া তাবাসসুম তিশা'র। তিনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আশার জায়গাটি যেমন বড় হচ্ছে একইভাবে হতাশাও বাড়ছে সমানুপাতিকহারে।সেশনজট, প্রশাসনের উদাসীনতা, শিক্ষা ও অবকাঠামোর অভাব সহ নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার ১৩ বছর পরেও এখনো কাটেনি ভবনের সংকট। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে সঠিক শিক্ষা পরিবেশ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সেশন জটের প্রভাব শিক্ষার্থীদের অন্যতম হতাশার কারন। নাম মাত্র কয়েকটি বিভাগ এগিয়ে থাকলেও সেশন জটের ফাঁদে আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগ যা শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশার সৃষ্টি করছে এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরা যখন কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি তখন এক বুক স্বপ্ন প্রত্যাশা থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এসে তা গুড়ে বালিতে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নানানমুখী সংকটে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা তার প্রতিফলন ঘটেনা বাস্তবে। শিক্ষার মান পরিবেশ সুযোগ সুবিধাসহ নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত হয়ে স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে চলে যেতে হয়। আমাদের মেধা ও মননের আশানুরূপ পরিস্ফুটন আর ঘটে না। সময় যাচ্ছে কিন্তু সংকট যেন কাটছেই না আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর শিক্ষার্থীদের হতাশা দিনে দিনে বেড়েই চলছে।

জরিপটির বিষয়ে কথা হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটির সহ-সভাপতি হাসিবুল হাসানের। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের সার্বিক দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যাতে অবহিত করা যায় সেই আকাঙ্খা থেকেই জরিপটি করা। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে মনোভাব তা বের করা আনা ও তুলে ধরা। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো প্রায় সবগুলোতেই আমরা নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছি,যা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

এছাড়াও জরিপকারী সংগঠন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার এডুকেশন সোসাইটির সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এই জরিপটির মাধ্যমে প্রাপ্য ফলাফল, বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আশা-হতাশার জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট তুলে ধরেছেন। যাতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই হতাশা এবং সংকটের জায়গা গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করতে পারে। তারা আরো জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.শুচিতা শরমিন তাদের জরিপের ফলাফল নিয়ে তৈরী করা রিপোর্টি গ্রহন করে তাদেরকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং সংকট গুলো নিয়ে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন।


Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.