ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন ৪৫ মাদরাসা শিক্ষার্থী। যাদের ১৬ জন শিশু। ৭ মাদরাসা শিক্ষকের প্রাণ গেছে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। জীবন উৎসর্গ করেছেন প্রাক্তন ২৩মাদরাসা শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের মধ্যে ৭৫ জনের সঙ্গেই মাদরাসার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২১ জন ছিলেন পবিত্র কোরআনের হাফেজ। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাজীব আহাম্মাদ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘তরুণ আলেম প্রজন্ম’ নামের একটি সংগঠন এই তালিকা করেছে। এতে ৭৭ জনের নাম ছিল। তথ্য বিশ্লেষণে ৭৫ জনের মাদরাসা-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার সর্বোচ্চ ৫ শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন অভ্যুত্থানে।
৪৫ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজন বাসায় বা পথে গুলিতে নিহত হয়েছেন, বাকিরা জীবন দিয়েছেন সরাসরি আন্দোলনে নেমে।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন আখতার হোসেন বলেছেন, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জনতার সঙ্গে রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
তরুণ আলেম প্রজন্মের মাওলানা বেলাল আহমেদ বলেন, অভ্যুত্থানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার মাদরাসা শিক্ষার্থীরা।
৯ বছর বয়সী শাফক্বাত সামির ১৯ জুলাই নিহত হয়। এ শিশু মিরপুরে জামেউল উলূম মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। একই দিনে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নিহত হয় ১২ বছর বয়সী জোবাইদ হোসাইন ইমন। ১৩ বছর বয়সী রাব্বি মাতবর ১৯ জুলাই মিরপুরে নিহত হয় গুলিতে। ১৪ বছর বয়সী ইবরাহীম খলিল যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকার হাফেজি মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিল। সমবয়সী সাদ মাহমুদ খান ছিল মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের জাবালে নূর দাখিল মাদরাসার ছাত্র। ২০ জুলাই সাভারের নিউমার্কেটের সামনে গুলিতে নিহত হয় সে। কিশোর আশিকুল ইসলাম আল-ইয়াস আশিক ১৯ জুলাই বনশ্রীতে গুলিতে নিহত হয়।
তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার ১৫ বছর বয়সী ছাত্র মুহাম্মাদ আদিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ২০ জুলাই নিহত হয়। চোখে গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী মো. বাঁধন ৬ আগস্ট মারা যান। সমবয়সী আশিকুল ইসলাম ১৯ জুলাই দিনাজপুরে গুলিতে নিহত হয়।
শরীয়তপুরের মাদরাসারশিক্ষার্থী এবং হাফেজ সিফাত হোসাইন পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের ইংলিশ রোডে গুলিতে নিহত হন।
১৭ বছর বয়সী শহীদ নাহিদুল ইসলাম ৫ আগস্ট আদাবর থানার সামনে নিহত হয়। একই দিনে নিহত হন খিলগাঁওয়ের আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলূমের ছাত্র হাফেজ মুহাম্মাদ যুবায়ের আহমাদ। ৫ আগস্ট চাঁনখারপুলে গুলিবিদ্ধ ১৭ বছর বয়সী ইশমামুল হক দুই দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যান।
তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ১৭ বছর বয়সী ছাত্র সায়েদ মুনতাসীর রহমান ৫ আগস্ট নিহত হন। ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে প্রাণ হারান চাঁদপুরের ফুলছোঁয়া মাদরাসার ১৮ বছর বয়সী হাফেজ সাজ্জাদ হোসাইন সাব্বির। গাজীপুরের মাখলাজুন ঈমান মাদরাসার শিক্ষার্থী মো. আয়াতুল্লাহর মরদেহ ১৬ আগস্ট ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায়। ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হন জামিয়া আশরাফিয়া মাদরাসার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মাদারীপুরে হাফেজ সাদিকুর রহমান ও তাওহীদ সান্নামাত ১৯ জুলাই নিহত হন। তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার আলিম শিক্ষার্থী নাসির ইসলাম ২০ জুলাই ঢাকায় এবং দেবীদ্বার ছৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম রাসেল ৪ আগস্ট কুমিল্লায় নিহত হন। মাদরাসাতুল আবরারের শিক্ষার্থী হাফেজ আবদুল্লাহ শনির আখড়ায়, হাফেজ আনাস বিল্লাহ ও আরজ আলী সাতক্ষীরায় নিহত হন ৫ আগস্ট। সাব্বির ১৮ জুলাই গুলিতে নিহত হন।
বারিধারার জামিয়া মাদানিয়ার হাফেজ মাহমুদুল হাসান, খালিদ সাইফুল্লাহ, জামিয়া বাগে জান্নাত মাদরাসার মাবরুর হুসাইন (গোলাম রাব্বি) ও শাহজাহান হৃদয় মহাখালীতে ২৪ জুলাই নিহত হন। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে মো. শাকিল, দারুস সালাম মাদরাসার নুর মুস্তফা কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে, জামিয়া কারিমিয়া আলেয়া বেগম বহুমুখী মাদরাসার জয়নুল আবেদীন ও কিশোরগঞ্জের জামিয়া ইসলামিয়া এমদাদুল উলূমের মুহাম্মাদ সিফাতুল্লাহ নিহত হন। ২১ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ মাইন উদ্দিন ২৫ জুলাই নিহত হন। ২০ জুলাই নরসিংদীর মাধবদীতে গুলিবিদ্ধ সুমন মিয়া ২৩ আগস্ট মারা যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হোসাইন মিয়া ৪ আগস্ট নিহত হন। একই দিনে ফেনীতে গুলিবিদ্ধ মাহবুবুল হাসান মাসুম ৭ আগস্ট চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।