জাবিপ্রবি প্রতিনিধি: মাস্টার্সের পরীক্ষা দিতে এসে আটক হয়েছে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবিপ্রবি) শাখার এক নেতা। সোমবার (৫ই মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের সেমিস্টার পরীক্ষা শেষে তাকে আটক করা হয়।
ছাত্রলীগের আটক ওই নেতা হলেন মাসুদ রানা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আজম হল শাখার সহ-সভাপতি ও সমাজকর্ম বিভাগ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক। ক্লাস না করেও তাকে পরীক্ষায় বসতে দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, মাসুদের পরীক্ষা দিতে আসার খবর পেয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক লিটন আকন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে জোড়ে হয়৷ পরীক্ষার ডিউটিতে থাকা শিক্ষক জাবিপ্রবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ড. মাহবুবুর রহমান তাকে (মাসুদ) বের করে দিতে অস্বীকৃতি জানান৷ পরে বিভাগের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ বিভিন্ন নিয়ম দেখিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের পরীক্ষা দেওয়ার পক্ষে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের যুক্তি দেন।
বিভাগের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ এবং প্রক্টর ড. সাদীকুর রহমান শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত মাসুদের আজকের পরীক্ষা দিতে অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরা প্রত্যাক্ষান করে৷ পরে পরীক্ষার হল থেকে বের করে মাইক্রোবাস ও অটোতে উঠিয়ে দিতে গেলে শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে মেলান্দহ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷ এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ছিলেন।
এ সময় ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান ও সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ চৌধুরী, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সহ সমন্বয়ক লিটন আকন্দ, ছাত্র শিবির নেতা মুরসালিন ইসলাম, ফাহাদ আহমেদ, ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এ কে এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ, যুগ্ম আহবায়ক মিয়াদ ইসলাম নিয়ন, সদস্য ইফতে খায়রুল ইফতি, মো. আমান উল্লাহ, হুমায়ুন কবিরসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলো৷
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মাসুদ জাবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক স্বাধীন-পলাশের হয়ে প্রভাব প্রতিপত্তি দেখাতো। সে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হুমকি ও জুলাই বিরোধী কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলো৷’ শিক্ষার্থীরা আরো জানান, ‘তাকে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখিনি সে কিভাবে পরীক্ষা দেয়। যেখানে আমাদের ৬০ শতাংশের নিচে উপস্থিতি থাকতে পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম নেই। অবশ্যই তার বিভাগের শিক্ষকদের হাত আছে।’
এ বিষয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, ‘তার বিষয়ে আমাদের প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং হয়। বিভিন্ন বিভাগের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে সেই ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা নিতে মত দিয়েছেন৷ পরবর্তীতে তারা দোষী সাব্যস্ত হলে এ সকল পরীক্ষা বাতিল হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই ভিত্তিতেই তাদের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’ ক্লাসে অভিযুক্ত মাসুদের উপস্থিতি একদম কম ছিল সে বিষয়টি স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশেষ বিবেচনায় কিছু শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়েছে৷ উপস্থিতর হারের বিষয়ে বাদবাকি কোর্স টিচাররাই ভালো জানেন।’
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাদীকুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাকে পরীক্ষা দিতে বাঁধা তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে একটি অটোতে উঠিয়ে দেই। পরবর্তীতে অটো বাইকটি থেকে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে এবং জুতার মালা পরানোর চেষ্টা করে। পরে পুলিশে সোপর্দ করে। এর কিছু সময় পর পরীক্ষা শেষে তার ক্লাসমেটরা তার বিষয়ে সুপারিশ করতে আসে এবং তাকে পুলিশ থেকে ছাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।’
তাকে আটকের বিষয়ে মেলান্দহ থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন ‘অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতা মাসুদ রানা এখন থানাতেই আছে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। তাকে আগামীকাল কোর্টে চালান দেওয়া হবে।’