ইবিতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ


ইবি প্রতিনিধি:
সারাদেশে ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা এ কর্মসূচি পালন করেন।  

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে ছিল— “আমাদের এই সমাজে, ধর্ষকের ঠাঁই নাই”, “বিচার চাই, আজই চাই, ধর্ষকের ফাঁসি চাই”, “আইন যদি না দেয় শাস্তি, জনতাই দেবে প্রতিবাদ গাঁথি”, “তনু, নুসরাত, নীলা, মৌমিতা, আর কতো হবে নিরবতা”, “রুখে দাঁড়াও সবাই এবার, ধর্ষকের শেষ হবে এবার”, “নারী মানে মা-বোন সবার, তাদের প্রতি কেন অত্যাচার?” ইত্যাদি।  

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।  

পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুকান্ত দাস বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের মেয়েরা সর্বপ্রথম আবাসিক হল থেকে ছাত্রলীগকে মুক্ত করে। বিশ্ববিদ্যালয়কে সন্ত্রাসমুক্ত করতে এই প্রক্রিয়া প্রথম নারীরাই শুরু করেছিল। আমরা আমাদের বোনদের অবদান ভুলে গেছি। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের খবর দেখছি, কিন্তু আমরা তার প্রতিবাদ জানাইনি। এটি আমাদের ব্যর্থতার জায়গা।”  

আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সায়েম আহমেদ বলেন, “স্বৈরাচারী সরকারের পতনের দিনকার একটি ঘটনা আমার মনে পড়ে— গণভবন ও জাতীয় সংসদ থেকে যখন সবাই বের হয়, তখন এক নারী সহযোদ্ধা লিখেছিলেন— বিজয় মিছিলের মধ্যে কিছু যুবক ওই নারীকে বারবার উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করছিল। তিনি যখন এটি ফেসবুকে লিখলেন, সেখানে যেসব মন্তব্য এসেছিল, তা গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো। আমি দেখেছিলাম— কত সহস্র নারী সেখানে নিজেদের হেনস্তার গল্প শেয়ার করছিলেন! যুগ যুগ ধরে আমাদের নারী সহযোদ্ধা, নারী বন্ধু, মা-বোনেরা এমন নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন।”  

তিনি আরও বলেন, “আমরা কতটা অপদার্থ, কতটা নির্লজ্জ! আমরা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়ে মাত্র কয়েকজন মিলে প্রতিবাদ করছি! অথচ হওয়া উচিত ছিল— একজন নারীর শ্লীলতাহানি হলে, তার বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিবাদ হওয়ার আগেই যেন যথাযথ বিচার করা হয়।”

বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া মাহমুদ মিম বলেন, “আমি শুধু নারীদের জন্য বিচার চাই না, আমি শিশু ধর্ষণের বিচারও চাই। আমি এসব ঘৃণ্য অপরাধের সহায়কদেরও বিচার চাই। যারা নারী ও শিশুদের হেনস্তা করে, যারা পুরুষদের বিরুদ্ধেও এমন জঘন্য কাজ করে— তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। শিশুরা খেলাধুলা করবে, হাসবে-খেলবে। কিন্তু কেউ যদি কোনো শিশুকে ফুসলিয়ে এমন অমানবিক কাজে যুক্ত করে, তার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। আমরা এর বাইরে কিছু দেখি না।”  

শিক্ষার্থীরা এ ধরনের বর্বর ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের দাবি জানান এবং ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। 

নবীনতর পূর্বতন