যমজ বোন যারীন তাসনিম ও যাহরা তাসনিম ধারাবাহিক সফলতা ধরে রেখে এখন স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে। ইচ্ছাশক্তি, প্রতিযোগিতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তারা পড়তে যাচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে। তাদের গৌরবময় অর্জনে পরিবারের পাশাপাশি এলাকা ও সমাজের মানুষও গর্ববোধ করেন।
যারীন তাসনীম আগে থেকেই স্বপ্ন দেখতেন প্রকৌশলী হবেন আর যাহরা তাসনীম হতে চেয়েছেন চিকিৎসক। অবাক বিষয়, তাদের মনের আকাঙ্ক্ষা পূরণে একচুলও এদিক-সেদিক হয়নি। সৃষ্টিকর্তাও যেন তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে দেরি করেননি।
গত সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির প্রাক্-নির্বাচনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে যারীন তাসনীম উত্তীর্ণ হয়েছেন।
অন্যদিকে গত ১৯ জানুয়ারি দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে যাহরা তাসনিম টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে উত্তীর্ণ হন।
যারীন ও যাহরা টাঙ্গাইলের সখীপুরের কচুয়া গ্রামের আবু জুয়েল সবুজ ও মা চায়না দম্পতির সন্তান। আবু জুয়েল সবুজ সূর্যতরুণ শিক্ষাঙ্গন আবাসিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন। আর চায়না আক্তার গজারিয়া শান্তিকুঞ্জ একাডেমি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
শুধু বুয়েট-মেডিকেলের সফলতাই নয়, এর আগেও যারীন ও যাহরা সমানতালে প্রতিযোগিতা করে লেখাপড়া করতেন। দুজনে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকেও তারা জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
আবু জুয়েল সবুজ ও চায়না আক্তার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যারীন ও যাহরার সাফল্য শুধু আমাদেরই গর্বিত করেনি। তারা যেন দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য জীবন গড়ে তুলতে পারে। আমরা স্বামী-স্ত্রী শিক্ষকতার পাশাপাশি দুই সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। সেভাবে তাদের সময় দিয়েছি। তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ টেককেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আমাদের মেয়েরাও চেষ্টা করেছে। সে জন্য তারা আজ সেই সাফল্যে পেয়েছে।
তারা আরও বলেন, আমাদের দোয়া থাকবে তারা যেন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-জাতির সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। মা-বাবা হিসেবে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কিছু নেই। তাদের জন্য শুভকামনা। তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
সখীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গণমাধ্যমকর্মী মামুন হায়দার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘যমজ দুই বোনের ধারাবাহিক সাফল্য আমাদের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। তাদের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও একাগ্রতা শিক্ষাক্ষেত্রে যে উচ্চতা অর্জন করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তারা প্রমাণ করেছে যে লক্ষ্য স্থির রেখে আত্মবিশ্বাস ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যেকোনো সাফল্য অর্জন সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, তাদের এই অর্জন শুধু তাদের পরিবারের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই গর্বের বিষয়। এটি আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি আশা করি, তারা ভবিষ্যতেও তাদের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে এবং দেশ ও সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।