‘ইদ’ বাদ, ‘ঈদ’ বানানে ফিরছে বাংলা একাডেমি


‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানে রমজানের রোজার শেষে ‘ঈদ’ এলেও বাংলা একাডেমির অভিধানে নতুন বানানে আছে ‘ইদ’। ‘ঈদ’ নাকি ‘ইদ’ হবে, বাংলা বানানরীতি নিয়ে বছর সাত/আট আগে থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। প্রতিবছর ঈদের আগে ওই বিতর্ক নতুন করে চাঙ্গাও হয়। বাংলাদেশের মুসলমানদের বহু বছরের ঐতিহ্যের ধারক ‘ঈদ’ বানান কেন ‘ইদ’ হবে, সে বিতর্ক নিয়ে এরপরের বছরগুলোতে বহু আলোচনা হলেও সমাধান হিসেবে একটি বানান স্থিরতা পায়নি। প্রতিবছর ঈদ এলেই যেন আবার ‘ইদ’-এর পক্ষ দল ও বিপক্ষ দল কিংবা ‘ঈদ’-এর পক্ষ ও বিপক্ষ দলের যুক্তির লড়াইয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়ে যায় বানান বিতর্ক যুদ্ধ। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, বানান নিয়ে বিতর্ক নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমি।

এবারের ঈদে সেই বানান বিতর্ক যুদ্ধের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। খোদ বাংলা একাডেমি থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ঈদকার্ডে লেখা হয়েছে ‘ঈদ মোবারক’। সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত ঈদকার্ডটি আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) তাদের ফেসবুকে পেজে পোস্ট করা হয়েছে। ‘ঈদ’ বানানে ফেরায় খুশি নেটিজেনরা। ওই পোস্টে সিফাতুল্লাহ আফিফ বঙ্গ নামে এক নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, ‘ইদ’ লেখার চাইতে ‘ঈদ’ লেখাটাই বেশি ভালো লাগে। সুন্দর লাগে। মনের মধ্যে একটা ভাব আসে। 

তবে ‘ইদ’ বাদ যাচ্ছে এমন প্রশ্নও করেছেন নেটিজেনরা। শিশির অপু নামে এক নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, ঈদ মুবারক! ‘ঈদ’ বানান তাহলে কি আগেরটাই থাকবে? এমন প্রশ্ন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজমকে করা হলে তিনি হেসে বলেন, এটা নিয়ে কিছু ভাবছি না। 

তিনি জানান, ‘ঈদ’ বানানের মতো বিতর্কিত কিছু শব্দের পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছে বাংলা একাডেমি। একটি কমিটি ইতিমধ্যে কাজ করছে, সেটি রিফর্ম করে ঈদের পর আরেকটি কমিটি করা হবে। এরপর কমিটির সুপারিশে বাংলা একাডেমির অভিধানে নতুন সংস্করণে এসব পরিবর্তন আনা হবে।

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, বিতর্কিত এসব বানান নিয়ে একটি কমিটি করব শিগগির। সেটি ঈদের পরে হতে পারে। কমিটির সুপারিশে আমরা একটি গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেব। বিতর্কিত এসব বানান এটা ব্যাকরণ অথবা আচরণগত বিষয়টি না। এটা অনেকটাই ঐতিহ্যগত, কোনো কোনো বানানে লোকবাচ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতি সারাবিশ্বে রয়েছে। এসব বিষয়তো বাংলা একাডেমি করে না। তারা একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দেবে, তারা এসব করবে।

তিনি বলেন, একটা কমিটি গঠন নিয়ে নিয়ে কাজ চলছে। আগামী ঈদের পর কমিটি হতে পারে। 

এর আগেও একটি কমিটি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, একটি কমিটি কাজ করছিল তবে সেটি ওভাবে এগোতে পারেনি। তবে কমিটি রিফর্ম করা হবে। তারপর তারা এসব বিষয়গুলো দেখবো।

বাংলা একাডেমির অভিধানে বানানের পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক দিন হয়েছে। মাঝেমধ্যে এসব বানান পার্যালোচনা করতে হয়। তারাই ধারাবাহিকতায় নতুন করে কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত নেবো গণতান্ত্রিকভাবে। সেখানে কোনো বানানের বিকল্প প্রস্তাবও রাখা যেতে পারে। পরবর্তী অভিধানের নতুন সংস্করণে এসব বানান অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

২০১৬-২০১৭ সাল থেকে ‘ঈদ’ শব্দের বানান নিয়ে জন্ম নেয় নতুন এক বিতর্ক। ওই বছর ‘ঈদ’–এর বদলে ‘ইদ’কেই বেশি গ্রহণযোগ্য বলা হয়েছিল বাংলা একাডেমির অভিধানে। শুধু ঈদ নয়, নবীর মতো শব্দের বানানে দীর্ঘ ঈ–কার ও হ্রস্ব ই–কারের মধ্যে কোনটি গ্রহণযোগ্য, সেটি নিয়ে বির্তক লেগেই আছে। এ ছাড়াও শহিদ নাকি শহীদ ইত্যাদি বানানও আছে বিতর্ক। এসব বিতর্ক নিরসনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বাংলা একাডেমি।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.