পুনর্বিজ্ঞপ্তির চক্রে জবির শিক্ষক নিয়োগ


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) বার বার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও পূরণ হচ্ছে না শূন্য পদ। ফলে শিক্ষক সংকটে চলছে একাধিক বিভাগ। এরই মধ্যে পার হয়েছে দুই বছরের অধিক সময়। পরিবর্তন হয়েছে দুই উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডি। কিন্তু এখনো পূরণ হয়নি শিক্ষক নিয়োগের শূন্য পদগুলো।

২০২৩ সালের ২৪ জানুয়ারি জবি ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক পদে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আবারও শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

এভাবে মোট ১৩টি বিভাগের ২১টি শূন্য পদের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম পুনর্বিজ্ঞপ্তির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে পূর্বের শূন্য পদ পূরণ না হয়ে নতুন পদ খালি হচ্ছে আরও। এ অবস্থায় দিন দিন শিক্ষক সঙ্কট বাড়ছে বিভাগগুলোতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

সর্বশেষ পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিভাগসমূহে শূন্য পদগুলো হলো, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২ জন সহকারী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগে ৩ জন প্রভাষক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ২ জন প্রভাষক (১ জন শূন্য পদে ও ১ জন সহকারী অধ্যাপকের শূন্য পদের বিপরীতে), দর্শন বিভাগে ৩ জন প্রভাষক, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগে ১ জন প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগে ১ জন সহকারী অধ্যাপক, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১ জন সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগে ৩ জন প্রভাষক (শূন্য পদে ২ জন এবং সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে ১ জন), সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ১ জন সহযোগী অধ্যাপক, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগে ১ জন অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১ জন প্রভাষক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে ১ জন সহকারী অধ্যাপক এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ১ জন সহকারী অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে প্রশাসনের কাছে চাহিদা পাঠানো হয়। চাহিদার ভিত্তিতে পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রার্থীরা রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন। পরে সেই আবেদনসমূহ বিভাগের প্ল্যানিং কমিটিতে উত্থাপিত হয়। প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ বাছাই বোর্ডে যায়। বাছাই বোর্ডে ৬ জন সদস্য থাকেন। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান এবং দুই জন বাহিরের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। সর্বশেষ বাছাই বোর্ডের সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগ চূড়ান্ত হয়।

উপাচার্য বদল মানেই পুনর্বিজ্ঞপ্তি
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশিভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিই ২ থেকে ৩ বছরের পুরোনো। প্রয়াত উপাচার্য ইমদাদুল হকের সময় কিছু বিজ্ঞপ্তি প্ল্যানিং কমিটি ও বাছাই বোর্ড পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তার মৃত্যু ও পরবর্তীতে উপাচার্য পরিবর্তনের ফলে সব নিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

পরবর্তী উপাচার্য সাদেকা হালিম দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন, তবে তার মেয়াদকালেও তা সম্পন্ন হয়নি। সর্বশেষ বর্তমান উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম দায়িত্ব নেয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

এদিকে শিক্ষক নিয়োগে এই দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পরিবর্তনের সঙ্গে বার বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘটনা একটি খারাপ চর্চা হিসেবে দেখছেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জবি শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হোক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পুনর্বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেসবের দ্রুত নিয়োগ সম্পন্ন করা হোক। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জবি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। এই দাবি সকল জবি শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবিগুলোর অন্যতম। এখনকার নিয়োগে অবশ্যই এর প্রতিফলন থাকতে হবে।

জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এর আগে নিয়োগ-নীতিমালা ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু এখন একটি ব্যতিক্রম নিয়োগ-নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে যারা যোগ্য এবং দক্ষতাসম্পন্ন, তারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এই নীতিমালা নিয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। তবে দীর্ঘ সময় এবং কিছুটা ভোগান্তি হলেও আমরা আশাবাদী এই নিয়োগ নীতিমালার ফলে খুব দ্রুতই বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদগুলো পূরণ হবে।

শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুতই শেষ হবে আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগ হয়। আমরা মনে করছি, আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলোতে সবার বাধাহীনভাবে আবেদনের সুযোগ ছিল না। এখন পরিবর্তিত সময়ে সকলকে সমান সুযোগ করে দিতে আমরা পুনর্বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই নিয়োগের মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.