আব্দুর রহিম, নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ নোয়াখালীর সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের মধ্য ভাটিরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নিচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। বিদ্যালয়টিতে নেই কোনো স্থায়ী একাডেমিক ভবন। জরাজীর্ণ ও অস্থায়ী টিনের ঘরেই চলছে পাঠদান, যেখানে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে পড়ে পানি, আর গ্রীষ্মে গরমে দম বন্ধ হয়ে আসে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে স্থানীয় দানবীর হাজী মুমিনুল হকের দানকৃত জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। শুরুতে চার কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবনে পাঠদান চললেও, ভবনটির আয়ুষ্কাল শেষ হওয়ায় গত বছর তা ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে মাত্র দুটি অস্থায়ী টিনের ঘরেই চলছে ৩২০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম। পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে একাধিক শ্রেণির পাঠ একসঙ্গে নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের ঘর দুটিতে নেই পর্যাপ্ত আলো ও বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি চুঁইয়ে পড়ে শ্রেণিকক্ষে, ভিজে যায় শিক্ষার্থীদের বই-খাতা। বাধ্য হয়ে ক্লাস বন্ধ করতে হয়। আবার প্রচণ্ড গরমে শ্রেণিকক্ষে বসে থাকাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুর আলম বলেন, “আমি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এখানে কর্মরত। বহুবার নতুন ভবনের জন্য চিঠি দিয়েছি। একবার বরাদ্দও হয়েছিল, কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। সর্বশেষ গত মাসে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলে তারা ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই।”
তিনি আরও বলেন, “টিনের ঘরে পাঠদান ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক। স্থান সংকুলান না হওয়ায় কখনো কখনো একাধিক শ্রেণির ক্লাস একত্রে নিতে হয়।”
স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, “এই পরিবেশে পড়ালেখা সম্ভব না দেখে বাধ্য হয়ে আমার ছেলেকে একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছি।”
অভিভাবক ও এলাকাবাসীদের অভিযোগ, জেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেখানে স্থায়ী ভবন রয়েছে, সেখানে মধ্য ভাটিরটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও অবহেলিত। তারা আশঙ্কা করছেন, ভবন নির্মাণে বিলম্ব হলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার আরও বাড়বে।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের জোর দাবি—সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ ও স্থায়ী একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ অতি দ্রুত শুরু করে।