এদিকে আজ ভোরে (২ এপ্রিল) বর্তমান বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলা চিঠি দিয়েছেন বুয়েট ইইই-র শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাদ লামীম। যা সবার মনে যায়গা করে নিয়েছে। জানিয়েছেন রাজনীতি বিহীন বুয়েট ক্যাম্পাস কতদূর এগিয়েছে।
টপার লামিমের খোলা চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনাকে প্রাথমিক অভিভাবক মেনে আপনার কাছে নিজের আর্জি জানাচ্ছি। আমি নাজমুস সাদ লামীম, বুয়েট ইইই-র শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি একজন ক্লাস টপার, গত টার্মে কমিউনিকেশন মেজর থেকে মাত্র দুইজন ৪.০০/৪.০০ জিপিএ প্রাপ্তদের একজন। আর মাত্র তিনটা পরীক্ষা আর থিসিস ডিফেন্সের পরই এই প্রেসটিজিয়াস ইন্সটিটিউশন থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। জানেন ম্যাম, আমার নেক্সট পরীক্ষা তিন এপ্রিল, ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসিং টু, যেটা তর্কসাপেক্ষে বুয়েট ইইই-র সবচেয়ে কঠিন সাবজেক্ট। নিজের প্রস্তুতি শেষ করে বন্ধুদের পড়াতে হবে সেজন্য তুমুল পড়তেছি কয়েকদিন ধরেই। কিন্তু গত আটাশ মার্চ রাতে যখন এত বেশি পলিটিকাল মানুষ অযাচিতভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে, তখন চিত্রটা পাল্টে যায়। সেই পুরনো শঙ্কা মনকে ঘিরে ধরে, আগের বুয়েট আবার ফিরে আসছে না তো! সেই রাতের পর রাত র্যাগ খাওয়ার ট্রমা, ক্যাম্পাসের মধ্যে হুটহাটই মারামারি, কত অকারেন্স, অবশেষে মৃত্যু। এই একই কাহিনী গত কয়েক দশকে তিনবার দেখেছে বুয়েট। আমি তো একমাসের মধ্যে চলেই যাবো, কিন্তু এই ক্যাম্পাসটার আর জুনিয়রদের কি হবে!
আপনি দয়া করে বুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন, আমরা আপনার প্রতীক্ষায় আছি। আপনাকে আমরা দেখাবো গত চার বছরের ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসে কতটা এগিয়ে গিয়েছি, আমাদের হলগুলোর মান কতটা বেড়েছে, কতগুলো ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন জিতেছি, আমাদের একাডেমিক কারিক্যুলাম কতটা সমৃদ্ধ হয়েছে, আমরা রিসার্চে কতদূর এগিয়ে গিয়েছি। ক্যাম্পাসে এখন বিশ্বমানের রিসার্চ হয়, আমার নিজের থিসিসও 6G কমিউনিকেশন নিয়ে, ফিনল্যান্ডের ওউলু, আমেরিকার ইউটি অস্টিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চকে টক্কর দিচ্ছি রীতিমতো, তাও এই আনডারগ্রেড লেভেলে।
ম্যাম, আমাদের ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতাকে সবসময় বুকে ধারণ করি। আশা করি কোনো জাতীয় দিবসে বুয়েট ক্যাম্পাসের কার্যক্রম আপনার সাথে উপভোগ করার সৌভাগ্য হবে। বুয়েট ক্যাম্পাসে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির উত্থানের যে বিষয়টা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হচ্ছে, সেটা আমার মতো সাধারণ ছাত্রদের জন্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। আপনাকে অনুরোধ করবো, এসব অপশক্তি কোনক্রমেই যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য আপনি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ম্যাম, আপনাকে কথা দিচ্ছি, আমাদের ক্যাম্পাসটা পুরোপুরি রাজনীতিমুক্ত করে দেন, আমরা প্রযুক্তিবিদ্যায় বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকায় ওপরে চলে আসবো খুব শীঘ্রই, এরমধ্যেই ডিপার্টমেন্টওয়াইজ র্যাংকিঙে আমরা ভালোও করছি। তারপর যখন কোনো বুয়েটিয়ান নোবেল পাবে, উচ্ছ্বাসিত হয়ে আপনার সাথে করমর্দন করে বলবো, Maam, we have done it, thank you very much.
ইতি, আপনার অনুগ্রহপ্রার্থী এক সাধারণ শিক্ষার্থী।