ইবিতে পোষ্য কোটায় পাস করলেই মিলছে ভর্তি

ইবিতে পোষ্য কোটায় পাস করলেই মিলছে ভর্তি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সর্বনিম্ন ৩০ নম্বর এবং ধর্মতত্ত্ব অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটে ২৪ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলছে, যা অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এই পাস মার্ক আবেদন যোগ্যতা মাত্র। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আবদুল মজিদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে সূত্রে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক শ্রেণিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক পেয়েছে তাদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসকের অফিস কক্ষে তাদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানা যায়, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ন্যূনতম ৩০ নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিলছে পোষ্য কোটাধারীদের। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডি ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস মার্ক ২৪ নম্বর রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টির পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের পোষ্য কোটায় ভর্তি বিষয়ে বিশেষ সুযোগ দিয়ে আসছিল। তবে এর আগে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ভর্তির বিশেষ সুযোগ বাতিল করা হয়েছিল। এ নিয়ে কর্মকর্তারা সাবেক উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও কর্মবিরতি পালন করেছেন। এর বিপরীতে পোষ্য কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন। এমনকি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও পোষ্য কোটার বিষয়টি বিবেচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আবার পোষ্য কোটায় ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ভর্তির ক্ষেত্রে এমন নিয়মকে মেধার অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ পদ্ধতি ২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ফলাফলের পরিপন্থি বলে দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, যে শিক্ষার্থী শুধু ৩০ মার্ক পেয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে সেও অন্য এক শিক্ষার্থীর মতো তার জীবনে সমান সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। সে কিন্তু শারীরিক বা পারিবারিক দিক থেকে কোনোভাবে পিছিয়ে নেই। এমনকি যে পরিবারে একজন চাকরি করে, সেই পরিবার এমনিতেই স্বাবলম্বী। তাহলে কীভাবে তাকে অনগ্রসর বলব? সে শুধু কীভাবে পৌষ্য কোটার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে? তাহলে পোষ্য কোটার অর্থ পোষ্য হলেই সাত খুন মাফ, পাসম হলেই তারা পৈতৃক সম্পত্তির মতো ভর্তি হওয়ার অধিকার রাখে। কেন তাদের এত সুবিধা দিতে হবে?

শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটা চালু হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। অথচ কোটাকে এমন এমন জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে গরিব, মেধাবী, সৎ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও যোগ্যতাকে মূল্যহীন প্রমাণ করা হচ্ছে। আর যদি এই সুবিধা রাখতে হয়, তাহলে গবির, দিনমজুর ও শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সন্তানদের জন্য রাখা হোক। তা না হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পোষ্য কোটার অবসান চাই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সমন্বয়ক এস এম সুইট দ্যা ডেইলি পাবলিকিয়ানকে বলেন, এমন নিয়মের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং যোগ্যরা ভর্তির সুযোগ হারাচ্ছেন। আমাদের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ছিল সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এমন পদ্ধতি চরম বৈষম্যমূলক। অনেক আগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এমন বৈষম্যমূলক নিয়ম চলে আসছে; যা কোনোভাবে কাম্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে এমন নীতির অবসান চাচ্ছি। পাশাপাশি সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবস্থার করার দাবি জানাচ্ছি।  

এদিকে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিরা এড়িয়ে যান। তারা বিষয়টিকে প্রশাসনের একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্ত বলছেন। ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.আনোয়ার হোসেন দ্যা ডেইলি পাবলিকিয়ানকে বলেন, এই বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করা ঠিক নয়। এটি একান্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভর্তি পরীক্ষা কমিটির নিজস্ব বিষয়। প্রশাসন কী করবে সেটা প্রশাসন বুঝবে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতানের সঙ্গে দ্যা ডেইলি পাবলিকিয়ানের পক্ষ থেকে একাধিকবার ফোন করলে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
নবীনতর পূর্বতন