ক্লাস না করেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা

ক্লাস না করেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা

ক্লাস না করেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ নেতা

আবদুল্লাহ আল তৌহিদ, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: কোনো ক্লাস না করা সত্ত্বেও বিশেষ বিবেচনায় এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রণয় বড়ুয়া। জানা যায়, সে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নোবিপ্রবি শাখার আব্দুল মালেক উকিল হলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদধারী নেতা ছিলো। 

সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে "রবীন্দ্র অধ্যয়নঃ কথা সাহিত্য ও প্রবন্ধ" বিষয়ে পরীক্ষা দিতে আসলে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী প্রণয় বড়ুয়া। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ নেতাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, প্রণয় বড়ুয়া ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্যতম ছিলো। সে কিভাবে কোনো ক্লাসে অংশগ্রহণ না করেও বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তাছাড়া পরীক্ষা সকাল ৯.৩০ মিনিটে শুরু হলেও সে আজকে প্রায় ৪০ মিনিট দেরিতে হলে প্রবেশ করে যা আইনত বৈধ নয়। 

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ এফ এম আরিফুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কোনো ক্লাস না করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই। সে কিভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে তার আজকের পরীক্ষাসহ আগামী পরীক্ষাগুলো না নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ 

২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, প্রণয় বড়ুয়া ছাত্রলীগের পদধারী সন্ত্রাসী ছিলো। ছাত্রলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে সে অনেক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে। চিহ্নিত এমন ছাত্রলীগ নেতা কোনোপ্রকার ক্লাস না করেও পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। এর আগে সে আরো তিনটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে স্পষ্ট বলা আছে ৬০℅ এর নিচে এটেন্ডেন্স থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তাহলে বাংলা বিভাগ কিভাবে তাকে বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর তদন্ত কমিটি গঠন করে তার পরীক্ষা বাতিলসহ চার দফা দাবি দিয়েছি। 


বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, রিজেন্ট বোর্ডের ৬ষ্ঠ সভায় অনুমোদিত "নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অধ্যাদেশ"র ১০(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্লাসে ৬০ শতাংশ উপস্থিতি না হলে কোনো শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাবে না। এছাড়া কেউ যদি ৬০-৬৯ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকে তাহলে তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। 


এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রণয় বড়ুয়া কোনোপ্রকার ক্লাস না করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছাত্রলীগ করার কারণে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে আমি ক্লাসে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাইনি। নানা ভয়ভীতির কারণে তখন ক্লাসে আসতে পারি নি। তাছাড়া এরআগে আমি একবছর লস দিয়েছি যার কারণে আমি একধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছি। ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করবো না শর্তে বিভাগীয় প্রশাসনের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলে আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। 


সমাজ বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (চন্দন আনোয়ার) বলেন, ছেলেটি আগে অপরাধ করেছে কিংবা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে এই বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না। সে আমাদের অনেক অনুনয় বিনয় করে বলেছে তাকে যেন একটা সুযোগ দেওয়া হয়। তাই আমরা বিভাগের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে তাকে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছি। তবে এখন বিষয়টি যেহেতু সামনে এসেছে তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তার সাথে একাত্মতা পোষণ করবো। 

বিভাগীয় চেয়ারম্যান বিশেষ বিবেচনায় এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে ক্লাস না করলেও পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নোবিপ্রবি পরীক্ষা উপ-নিয়ন্ত্রক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ক্লাস না করলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়েের উপাচার্য মহোদয় তার নির্বাহী ক্ষমতা বলে কাউকে সুযোগ দিতে পারে। বিভাগীয় চেয়ারম্যান উপাচার্য মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে কাউকে এমন সুযোগ দিতে পারবে। এর বাহিরে তার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যেহেতু স্পষ্ট নিয়ম আছে তাহলে এর ব্যত্যয় ঘটানোর সুযোগ নেই। 

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বাংলা বিভাগের এই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেইনি৷ বিভাগীয় প্রধান আইনবহির্ভূতভাবে কিভাবে একজন শিক্ষার্থী কোনো ক্লাস না করলেও তাকে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.