বাকৃবি প্রতিনিধি: হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। একজন শিক্ষার্থী কোন স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে সেটা নির্ভর করে যে বিষয়ে তার ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা তার উপর। তেমনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইচ্ছাটাও অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আসছে ২৫ অক্টোবর হবে সেই কৃষি গুচ্ছ ভর্তিযুদ্ধ। কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার শেষ সময়ের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়েই পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ ইকবাল।
অতীব কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়েই একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা লাভ করেন। অত্যন্ত ধৈর্য, কঠোর সাধনা, অদম্য পরিশ্রম ও তুখোড় মেধা দিয়েই অর্জন করতে হয় এই সাফল্যের মুকুট। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা বহুগুণ বেড়ে গেছে এবং বদলে গেছে প্রশ্নকাঠামো ও পরীক্ষার ধরনও। সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী দিনশেষে পরাজয় মেনে নেন। তাই এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এবং দিনশেষে নিজেকে সফল প্রমাণ করতে হলে শেষ সময়ে কিছু কর্মপন্থা মেনে চলা খুবই জরুরি।
পাঠ পরিকল্পনা তৈরি ও টপিক বিশ্লেষণ
প্রথমেই দরকার পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করা ও টপিক বিশ্লেষণ। যোদ্ধারা অবশ্যই জানেন এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে পরীক্ষা হবে। ২০২৩ সালের এইচএসসি/সমমানের পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী (ইংরেজি ১০, প্রাণিবিজ্ঞান ১৫, উদ্ভিদবিজ্ঞান ১৫, পদার্থবিজ্ঞান ২০, রসায়ন ২০ ও গণিত ২০) সর্বমোট ১০০ নম্বরে পরীক্ষাটি হবে।
ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হলে পরীক্ষার সিলেবাস সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। এক্ষেত্রে শেষ সময়ে টপিক অনুযায়ী পড়াশোনা এগিয়ে নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে কম সময় দেওয়াই শ্রেয়। যে কোনো টপিকের বেসিক সম্পর্কে খুবই ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং টপিক বুঝে মনে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ভিত্তি মজবুত থাকলে যে কোনো প্রশ্নের সহজেই উত্তর করা সম্ভব।
কী পড়বেন? কতটুকু পড়বেন? কীভাবে পড়বেন? প্রতিদিনের পাঠ পরিকল্পনায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করুন এবং তা মেনে চলুন। শেষ সময়ে প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বেশি বেশি পড়তে পারেন।
যেহেতু গণিত অংশ উত্তর করতে সময় লাগবে তাই যারা হিসাব কষতে সময় লাগান তাদের জন্য শেষে উত্তর করাই ভালো। এদিকে ইংরেজিতে পুরাতন প্রশ্নব্যাংক দেখলেই বুঝবেন প্রশ্ন তেমন কঠিন হয় না। তবে বেশি খুশি না হয়ে মনোযোগ দিয়ে বুঝে উত্তর দাগাবেন। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন অংশের জন্য প্রশ্নব্যাংক দেখতে পারেন। এখানে টপিক বিশ্লেষণ করলে প্রশ্ন কোন জায়গা থেকে বেশি দিবে সহজেই তা বুঝতে পারবেন।
শেষ সময়ে কিছু জরুরি ব্যবস্থাপনা
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে বিজয় হাসিল করতে অনেক রণকৌশল রপ্ত করতে হয়। সময় ব্যবস্থাপনা তার মধ্যে অন্যতম। শেষ সময়ে প্রচুর অনুশীলন প্রয়োজন যাতে কীভাবে কম সময়ের মধ্যে সঠিক উত্তর করা যায়। এর জন্য শর্টকাট টেকনিক, অপশন টেস্টিংসহ আরও বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে।
একটি নির্দিষ্ট টাইম সেট করে নিজেকে যাচাই করতে হবে। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাদ পড়ে যান। প্রতিনিয়তই প্রত্যেক বিষয়কে প্রায় সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হয়। তাই সাফল্য পেতে হলে শেষ সময়ে অধিক মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে।
দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিবো এমন চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ভর্তির সঠিক প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা সেকেন্ড টাইম পরীক্ষা দিবো এমন চিন্তা করে। তবে এমন চিন্তাই তাদের পড়াশোনার বেগ মন্থর করে দেয়। তাই আজকের কাজ আজকেই করতে হবে। শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি এবং পাঠ্যপুস্তক ভালোভাবে আয়ত্তে থাকা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মূলভিত্তিই হলো উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়গুলো। তাই পাঠ্যপুস্তক খুবই ভালোভাবে আত্মস্থ করা জরুরি। তাই উচ্চ মাধ্যমিক বইয়ের প্রতিটি বিষয় আগে থেকে আয়ত্তে থাকলে শেষ সময়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হয় না। মাঝে মাঝে দেখা যায় একজন লেখকের বই পড়লে হয় না। তথ্যবহুল ভিন্ন ভিন্ন লেখকের বই থাকায় প্রথমে একটি বই আয়ত্ত করতে হবে। আর অতিরিক্ত তথ্য জানার জন্য বাজারে প্রচলিত গাইড বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন।
নিয়মিত পড়াশোনা
পড়াশোনা নিয়মিত করা খুবই জরুরি। অন্যথায় পড়াশোনার ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়গুলো অধ্যয়ন করেন, তা পরে ভুলে যান। এক দিন পড়তে না বসলে পরে আর পড়তে ইচ্ছে করবে না। আপনার মনোযোগ নষ্ট করার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। শেষ সময়ে এমন ভুল করা চলবে না। কাঙ্খিত সাফল্য খুবই কাছে। তাই নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। কঠিন বিষয়গুলো বারবার পড়তে হবে।
নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। ইতিবাচক মনোভাব ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া খুবই জরুরি। 'আমি পারব, আমাকে পাড়তেই হবে'- এটি নিজের মাঝে ধারণ করতে হবে। এ সময় অন্য কারও সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা যাবে না। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এবং আত্মসন্দেহ শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসকে হ্রাস করে। আত্মবিশ্বাসী মনোভাব, সময়ানুবর্তিতা এবং ভালো প্রস্তুতি আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের চূড়ান্ত শিখরে।
লেখক: আসিফ ইকবাল , বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।