খুমি সম্প্রদায়ের প্রথম নারী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তংসই

বাংলাদেশের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায় ‌‌‘খুমি’। সর্বসাকুল্যে তাদের জনসংখ্যা আনুমানিক চার হাজার। বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে খুমিদের বসবাস।

খুমি সম্প্রদায়ের প্রথম নারী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন তংসই
বাংলাদেশের অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায় ‌‌‘খুমি’। সর্বসাকুল্যে তাদের জনসংখ্যা আনুমানিক চার হাজার। বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে খুমিদের বসবাস। এ সম্প্রদায়ের মেয়ে তংসই খুমি। এ সম্প্রদায়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তিনি। এ খবরে উচ্ছ্বসিত খুমি সম্প্রদায়ের লোকজন।

তংসই খুমি সদ্যই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় তারাছা ইউনিয়নের দুর্গম মংঞো পাড়ায়। ১১ বছর বয়সে হারান পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাবাকে। মায়ের উপার্জন, চেষ্টা আর ভাইদের অনুপ্রেরণায় শিক্ষা জীবনের এই স্তরে পৌঁছান তিনি। 

চার ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় তংসই। বান্দরবান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকার হলিক্রস কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। তার বড় ভাই সুইতং খুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে মাস্টার্স পর্বে এবং আরেক ভাই তংলু খুমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। সবার ছোট বোন রেংসই খুমি ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষে পড়ছেন।

তংসই খুমি বলেন, আমাদের সম্প্রদায়টা অনেক ছোট। এখানে পড়াশোনার দিক থেকে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। মেয়েরা সাধারণত এই বয়সে আর লেখাপড়া করে না। মেয়েরা বড় হলে পরিবারের স্বার্থে জুম চাষে যোগ দিতে হয়। আমাদের গ্রাম থেকে আমার একজন পিসি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন যেটা ছিল সর্বোচ্চ। তারপরেই আমার এতদূর আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহের শুরু মূলত এই দৃশ্যগুলো থেকেই। 

তিনি বলেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বাবা মারা যায়। পরিবারের জন্য এ ঘটনা অনেক বড় একটা ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়। পরিবারে অভাব দেখা দেয়। ওই পরিস্থিতিতে আমাদের লেখাপড়ার খরচ সামাল দেওয়া মায়ের একার পক্ষে অনেক কঠিনই ছিল। আমার দাদিরাও সেসময় আমার মা-কে বলেছিলেন মেয়েকে আর পড়ানোর দরকার নেই, শুধু ছেলেদের পড়ালেই হবে। কিন্তু আমার মা সে কাজ করেননি। তিনি নিজে পড়ালেখা করতে পারেনি বলে জেদ করেই আমার পড়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি যে কষ্ট করেছেন, চাননি আমাকে সে কষ্টে দেখতে। তখন মা কৃষি কাজ শুরু করেন। পরে আমার মা তাঁতের কাজ করে খুমিদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর চাঁদর তৈরি করে আমাদের পড়াশোনার খরচ চালান।  

খুমিদের সামাজিক সংগঠন খুমি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি সিঅং খুমি বলেন, তংসইয়ের বাবা খুমি জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে গঠন করা এই কাউন্সিলের একজন প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তারই মেয়ে তংসই আমাদের সম্প্রদায়ের গর্ব। এর আগে কিছু মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করলেও প্রথম নারী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেল। খুমী জনগোষ্ঠীতে নারীদের শিক্ষার হার খুবই কম। এ অবস্থায় তুৎসইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। 
 নারী শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা পালন করবে। 

উল্লেখ্য, খুমি সম্প্রদায় থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জন ছেলে শিক্ষার্থী দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী হলেন খুমিরা। সরকারি হিসাবে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা তিন হাজার ৯৯৪ জন। তাদের বসবাস একমাত্র বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলায়। 
Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.