উপাচার্য সমীপে: স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ুন

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷ বাংলাদেশের ৪৪ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম ও একমাত্র বিজ্ঞান
উপাচার্য সমীপে: স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ুন - ইয়াসির আরাফাত
ইয়াসির আরাফাত

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷ বাংলাদেশের ৪৪ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ময়মনসিংহ বিভাগের প্রথম ও একমাত্র বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷ ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়৷ জামালপুর জেলা শহরে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হলেও পরবর্তীতে স্থানান্তরিত হয় ৩০ একরের মেলান্দহ উপজেলার ফজিলাতুন্নেছা শেখ মুজিব ফিসারিজ কলেজে৷ ৪টি অনুষদাধীন ৭ বিভাগের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মাস্টার্স প্রোগ্রামও অনুমতি পেয়েছে৷ কলেজ আমলের একটি ত্রিতল ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা পরবর্তী একটি টিনশেড ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম চলমান যা সম্ভবত বিশ্বে নজিরবিহীনও বটে৷ প্রায় পনেরশো শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে তিনটি বাস এবং কলেজ আমলের ২টি পুরাতন ছোট হল৷ প্রতিষ্ঠার ৭ বছর পেরোলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ ও ডিপিপি পাশ হয়নি৷ রয়েছে তীব্র ক্লাসরুম, শিক্ষক, আবাসন ও প্রয়োজনীয় একাডেমিক ইকুইফমেন্ট সংকট৷ পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন অধ্যাপক দূরের কথা নেই সহযোগী অধ্যাপকও অথচ চলছে স্নাতকোত্তর কার্যক্রম৷ 

 বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের দূষ্টিকোন থেকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডেফিনেশন সেটা এখানে অনেকটাই অনুপস্থিত৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা উচ্চশিক্ষার মূল লক্ষ্যেই হলো গবেষণা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন সাধন করা। বিশ্ববিদ্যালয় হলো সেই জায়গা যেখানে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করার মাধ্যমে নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে। এতে মুক্ত জ্ঞান চর্চার কোনো বিকল্প নেই। তাই দরকার শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব অনুকূল পরিবেশ, ইকুইফমেন্ট ও প্রণোদনা। যা শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও মনন বিকাশ সাধন করতে পারবে। সেই সঙ্গে নিজস্ব চিন্তাশক্তি বিকশিত করে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে পারবে। কিন্তু গবেষণা নাহয় বাদই দিলাম একাডেমিক কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা কতটুকু সুবিধা পাচ্ছে, কতটুকু মেধা ও মননে বিকশিত হওয়ার সুযোগ মিলেছে প্রশ্ন এখানে৷ গুচ্ছ অন্তভূক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভর্তি ফি এখানে অথচ সেই তুলনায় শিক্ষার্থী সুযোগ সুবিধা একেবারে কম৷ রয়েছে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, কোর্স ক্রেডিট ফি ও আনুষঙ্গিক ফির অভিযোগ৷ একাডেমিক, ক্যারিয়ার ও গবেষণা নিয়ে আন্তজার্তিক বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদের আমন্ত্রণে সেমিনার বা কর্মশালার আয়োজন দেখা মেলা দূরুহ৷ অভিযোগ রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযোগ্যতা, দূর্ণীতি, দলীয় বিবেচনা ও স্বজনপ্রীতির৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ শিক্ষামূলক কার্যক্রমের তথা ক্লাব প্র্যক্টিজিং উপস্থিতি নেই বললেই চলে৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনাগ্রহ, তদানিন্তন ক্ষমতাশীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একচেটিয়া প্রভাব ও অন্যকোন সংগঠনকে প্রতিষ্ঠিত না হতে দেওয়ার নিচু মানসিকতা৷ রাজনৈতিক সহাবস্থান দূরের কথা ভিন্নমত হলেই চলতো নির্যাতন৷ সব মিলিয়ে একটা সংকটাপন্ন ও পিছিয়ে পড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি ছিলো বশেফমুবিপ্রবি৷ 

বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে, শিক্ষার্থীদের মৌলিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণে, মেধা ও মনন বিকাশে, দীর্ঘদীনের আকাঙ্খিত স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে স্বৈরশাসক পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের বশেফমুবিপ্রবির উপাচার্য মহোদয় সমীপে শিক্ষার্থীদের হয়ে কিছু আর্জি৷  


১. অতি দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ, পরিকল্পনার রোডম্যাপ ও ডিপিপি পাশ চাই৷ 


২. সরকার থেকে বিশেষ বাজেট এনে নতুন একাডেমিক ভবন ও হল নির্মান এবং প্রয়জনীয় সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে৷ 

(চলতি ক্লাসরুম ও আবাসন সংকট, ল্যাব ও একাডেমিক অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট সংকট, কো-কারিকুলাম এক্টিভিটিসের জন্য টিএসসি, এবং গবেষণার দ্বার উন্মোচনের জন্য উদ্যোগ ও বরাদ্দ)


৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও হলের নাম পরিবর্তন করতে হবে৷


এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হলোঃ ‘জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (জাবিপ্রবি)’৷ 


৪. স্বৈরাচার আওয়ামী সিন্ডিকেট কমিটি ভেঙ্গে নতুন সদস্যের সিন্ডিকেট চাই। 


৫. তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রত্যেকটা নিয়োগ পূর্নমূল্যায়ন করতে হবে৷ এতে অযোগ্যতা, দূর্ণীতি, দলীয় বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি, কিংবা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি থাকলে তাকে বহিষ্কার করতে হবে৷ 


৬. পূর্ববর্তী স্বৈরাচার সরকারের নিয়োগকৃত ভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যেকটা দূর্ণীতির আমলনামা বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন ও বিচার সুনিশ্চিত করতে হবে এবং দূনীর্তির তথ্য শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে৷ 


৭. প্রো -ভিসি (শিক্ষা ও প্রশাসন) এবং সব ডিপার্টমেন্টে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ দিতে হবে৷ 


উল্লেখিত বিষয়গুলো অতি দ্রুততম সময়ে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়জনীয় দূশ্যমান উদ্যোগ গ্রহন ও বাস্তবায়ন করতে হবে৷ 


৮. ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন সিন্ডিকেটে পাশ করিয়ে দ্রুত ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে৷ এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে৷ তবে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ মতামতের ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতির নতুন বন্দোবস্ত/সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন আসলে সেটি ভাবতে পারেন৷ 


৯. নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের’ বশেফমুবিপ্রবি ক্যাম্পাসের তালিকাভুক্ত নেতাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং সহযোগীদের বিভিন্ন মেয়াদী শাস্তি সুনিশ্চিত করতে হবে৷ যারা বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী নিপীড়ন, চুরি, দূর্ণীতি, টেন্ডারবাজির সাথে যুক্ত ছিলো৷ এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় আন্দোলনকারীদের হুমকি, স্থানীয় সন্ত্রাসী ও দেশীয় অস্র নিয়ে হামলার প্রস্তুতি ও হত্যাচেষ্টা করেছিলো এবং আন্দোলনকারীদের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দিয়েছিলো৷ 


১০. গবেষণায় বরাদ্দঃ বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্স করার লক্ষে গবেষণায় আগ্রহ সৃষ্টি ও বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে৷ 


১১. প্রত্যেক বিভাগে ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও মৌলিক গবেষণার উপর কোর্স অন্তভুক্ত করতে হবে৷ এতে সরকার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থানকারী সংস্থা থেকে অর্থ প্রাপ্তির জোরালো আবেদন, প্রাপ্তি নিশ্চিত ও সদ্ব্যবহার করতে হবে৷ 


১২. শিক্ষক সংকটঃ বিভাগ ভিত্তিক চাহিদার প্রেক্ষিতে অতি দ্রুততম সময়ে প্রয়জনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে৷ এতে অবশ্য অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ সুনিশ্চিত রাখতে হবে৷  


১৩. বিদ্যমান সেজনজট দূরীকরণে প্রয়জনীয় আশু পদক্ষেপ নিতে হবে৷ 


১৪. ক্লাসরুমে এয়ারকন্ডিশন ও ওয়াইফাই সুবিধা দিতে হবে৷ 


১৫. সহ শিক্ষামূলক ক্লাব গঠনে উদ্যোগ গ্রহন ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে৷ যেমন: বিএনসিসি, ডিবেটিং ক্লাব, সাংবাদিক সমিতি, ক্যারিয়ার ক্লাব, ইংলিশ ল্যংগুইজ ক্লাব.. ইত্যাদি৷ 


১৬. মাত্রাতিরিক্ত স্নাতক ভর্তি ফি, কোর্স ক্রেডিট ফি (সেমিষ্টার ফি) এবং অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক বাৎসরিক বিভিন্ন ফি (৪২টি) কমাতে হবে৷ 

এতে ক্রেডিট ফি সর্বোচ্চ ৭০-৯০ টাকা, বাৎসরিক পূনঃভর্তি ও বিবিধ ফি ১৫০০ টাকায় আনতে হবে৷ 


১৭. হল ও ক্যাফেটেরিয়ায় ভুর্তুকি প্রদান করতে হবে৷ 


১৮.  রাত ৯.০০ টায় শহর থেকে ক্যাম্পাসমুখি ১টি বাস চলাচল চালু করতে হবে৷ (শহরে শিক্ষার্থীদের টিউশনি ও অন্যান্য প্রয়জনীয় কাজ থাকে)৷  


১৯. প্রতি ৬ মাসে অন্তত ২ টি গবেষনা, একাডেমিক ও ক্যারিয়ায় বিষয়ক সেমিনার/কর্মশালার আয়োজন করা৷ এতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক খ্যতি সম্পন্ন অতিথি আনা৷ 


২০. জনতা ব্যাংকের প্রতিশ্রতির ২ টি বাস আদায় করা৷ 


২১. লাইব্রেরির প্রয়জনীয় ও ডিপার্টমেন্ট থেকে সুপারিশকৃত বইয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, আয়তন বৃদ্ধি, রাতে নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখা৷ 


২২. অসচ্ছল ও দূরবর্তী শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে হলে নতুন সিট বরাদ্দ দিতে হবে৷ এতে ডিপার্টমেন্ট সমতার দিকেও সুদৃষ্টি রাখা৷  


২৩. ক্যাম্পাসের নিরাপত্তায় আনসার বাহিনী আনা৷ 


২৪.  শিক্ষার্থীদের কল্যানার্থে ছাত্র কল্যান সেল/উপদেষ্টা গঠন৷ 


২৫. লাইব্রেরিতে একটি জুলাই ২৪ কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা৷ এতে বিপ্লব সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ছবি, সাহিত্য, ম্যাগাজিন, প্রকাশনা, পত্রিকা ও চিত্রকর্ম সংরক্ষিত থাকবে৷ 


২৬. লাইব্রেরিতে একটি ইসলামিক কর্ণার প্রতিষ্ঠা করা৷ শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় চেতনা ও মূল্যবোধ বিকাশে যা অত্যাবশ্যকীয়৷ এবং নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের কক্ষের ব্যবস্থা করা৷ 


২৭. মেডিকেল সেন্টারকে আধুনিকায়ন করা, পর্যাপ্ত ঔষধসহ চিকিৎসা সামগ্রী নিশ্চিত করা৷ 


২৮. প্রশাসনিক বিভাগে কাজের মান উন্নয়নের লক্ষে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষনের আওতায় আনতে হবে৷


শিক্ষার্থীঃ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়৷

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.