বিভাগ প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ, মারধরের হুমকি ছাত্রলীগ কর্মীদের

বিভাগ প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ ;  মারধরের হুমকি ছাত্রলীগ কর্মীদের
বশেফমুবিপ্রবি প্রতিনিধি: জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেফমুবিপ্রবি) ফিশারিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধের জেরে কিছু সিনিয়র শিক্ষার্থী এই হুমকি দিয়েছেন বলে জানা যায়।

অভিযোগকারী মো: ইয়াসির আহমেদ, ফিশারিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এতে ৫৩ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষর রয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, “গত ৩০ অক্টোবর বিভাগ প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শিক্ষকরা অমীমাংসিত রেখে শেষ করেন। পরে বাড়ি ফেরার পথে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা আমাকে ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং গায়ে হাত তোলার হুমকি দেয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা সরে যায়।”

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের নাম ভুক্তভোগী তার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, রাশেদ মামুন, রোকনুজ্জামান জিম, আরিফুর রহমান, মো: হাফিজ উদ্দিন, মো: ফাহিম ও মাহমুদুল আলম সোহান এই ঘটনার সাথে জড়িত। অভিযুক্তরা হলেন একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্তদের অনেকেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও তার দোসর। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির প্রেক্ষিতে তারা কারো জন্য হুমকিস্বরুপ হবে না বলে মুচলেকাও দিয়েছিলো।

অভিযুক্তদের মধ্যে বশেফমুবিপ্রবির মির্জা আহম হল শাখা ছাত্রলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদ মামুন, প্রচার সম্পাদক মো: হাফিজ উদ্দিন ও মাহমুদুল আলম সোহান সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থী মো: ইয়াসির আহমেদ বলেন, গত ৩০ অক্টোবর আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রতিনিধি নির্বাচনের বিষয় মিটিং ছিলো। সেখানে শিক্ষকরা সহ আমরা আমাদের সিনিয়র এবং জুনিয়র মিলে মোট তিন ব্যাচ বসেছিলাম প্রতিনিধি নির্বাচন কিভাবে হবে। আমাদের সিনিয়ররা চায় সিলেকশন কিন্তু বাকি অধিকাংশ (২ ব্যাচ) শিক্ষার্থী চায় ইলেকশনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হোক। কিন্তু সিনিয়র ভাইয়েরা রাজি হয় না। পরে আলোচনা চলার পর অমীমাংসিত অবস্থায় মিটিং শেষ করে দেয় শিক্ষককেরা।

এরপর আমি ফেরার পথে পথে রাশেদ ভাই আমাকে ডেকে নেয় এবং বলে যে ছাত্রলীগ করতাম তার প্রমাণ দেখা। আমরা ছত্রলীগ করি নাই। তার পরপরই আমাকে সহ আমার মাকে নিয়ে গালি দেওয়া শুরু করে। এরপর আমি বলি ভাই এমন কথা বলতে পারেন না। এর পর বলল তোকে এখন পেটাবো, মেরে ফেলব তুই কি করতে পারবি? তখন আমি বলি মারেন ভাই মারেন, মারেন। তখন এমন পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে তখন আর গায়ে হাত তুলতে পারেনি। 

অনারা কয়েকজন ঘিরে ধরে আমার সাথে এমনটি করে। রাশেদ ভাই সরাসরি হুমকি দিয়েছে। জিম ভাই ইচ্ছামতো গালাগালি করেছে। সাথে আরিফ ভাই, সোহান ভাই গালি ও থ্রেট দিয়েছে আর ফাহিম ভাই আমাকে ধমকাদমকি করেছে। আমাদের মেয়ে জুনিয়াররা বাসে তাদের বলাবলি করেছে শুনেছে যে এরপর থেকে আর হুমকি দিব না, সরাসরি গায়ে হাত দিব।

তিনি আরো বলেন, ঐ ঘটনার পর থেকে হুমকির মুখে আছি। প্রক্টর বরাবর আবেদন করেছি। যারা এমন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। 

যে সময় ঘটনাটি ঘটে সে সময়ে রেকর্ড করা ২ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি অডিওতে উত্তেজিত ভাবে কথা বলতে শোনা যায় সবাইকে। সেখানে অভিযুক্তদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায় 'মারলে তুই কি করবি।"

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাশেদ মামুন বলেন, আমাদের স্যারেরাসহ আমরা ও জুনিয়াররা মিলে বসা হয়েছিলো। আমাদের সবার নামে নাকি ছাত্রলীগ করার অভিযোগ আছে এমন কথা বলে জুনিয়ররা। এর পর মিটিং শেষে ইয়াসিরকে ডেকে নিয়ে বলা হয়েছিলো তোদের কাছে নাকি ডকুমেন্ট আছে দেখা এখন। এছাড়া দেখে নেওয়া বা মারধরের কোন ঘটনা ঘটেনি। 

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান জিম বলেন, আমাদের সবাইকে গণহারে ছাত্রলীগের দোসর বা ছাত্রলীগ বলেছিল ওরা। ওদের কাছে নাকি ডকুমেন্ট আছে। আমি কখনো ছাত্রলীগ করি নাই। এই ডকুমেন্ট দেখার জন্যই ডাকা হয়েছিলো। ওরা আমাদেরই ছোট ভাই এসব (হুমকি) কথা কি আমাদের বলা সম্ভব? 

অভিযুক্ত মো: হাফিজ উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যে অভিযোগ দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
এছাড়াও এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত বাকী শিক্ষার্থীদের মুঠো ফোনে কল দেওয়া হলে ধরেনি তারা। 

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. সাদিকুর রহমান বলেন, "এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। রবিবারে এটার একটা আউটপুট পাওয়া যাবে। যারা ছাত্রলীগে যুক্ত ছিল এবং মুচলেকা লেখা দিয়েছিল তাদের মধ্যে যদি কেউ থাকে এবং প্রমাণিত হয় কঠোর একশনে যেতে হবেই।"
নবীনতর পূর্বতন