বশেফমুবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বশেফমুবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বশেফমুবিপ্রবিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশ: শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেফমুবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রবেশ করলে প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৬ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে গনসংযোগ করত আসেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহান, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নাকিবুল ইসলাম চৌধুরী ও আব্দুর রহিম রনি। জানা যায়, তাদের আগমনের সময় প্রধান ফটকের সামনে স্থানীয় নেতাকর্মী এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে ছাত্রদলপন্থী কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হন। নেতারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করতে তার দপ্তরে যান।

ছাত্রদল নেতাদের এমন প্রবেশের কথা শুনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। বিভিন্ন স্লোগান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের বেরিয়ে যাওয়ার দাবি জানায় তারা৷ পরে শিক্ষার্থীরা দপ্তরে ঢুকে পড়ে এবং উপ্তবাকবিতন্ডার সূষ্টি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রদলের প্রতিনিধি তিনজন ছাত্রদের সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করে এবং উপাচার্য ও শিক্ষকরা পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল করতে সক্ষম হয়।

শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সাথে আলোচনা করার পর, আগত নেতারা ক্যাম্পাসে তাদের আগমনের কারণ ব্যাখ্যা করেন। তারা জানান, ক্যাম্পাসের সার্বিক অবস্থা অবলোকন, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা অভিমত ও উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। উতপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই উপাচার্যের উপস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত ও ক্যাম্পাসের এক ছাত্রদলপন্থীকে নিয়ে অভিযোগ শুনে নেতারা৷ পরে উপাচার্যের মধ্যস্থতায় একটি সমাধান নিশ্চিত হয় এবং বশেফমুবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি মেনে নিয়ে নেতারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

এসময় শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য উপস্থাপনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাত্রদলের ‘গৌরবোজ্জ্বল অতীত; সংগ্রামী বর্তমান ও আগামীর প্রতিশ্রুতি’ এবং ‘তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ সম্বলিত দুটি বই বিলি করার চেষ্টা করেন তারা। এর পর ক্যাম্পাসের বাহিরে কেন্দ্রীয় নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলপন্থী শিক্ষার্থীদের সাথে একটি প্রোগ্রাম করে।

রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদলের এমন কার্যক্রমে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা বলছেন, রাজনীতিমুক্ত একটি ক্যাম্পাসে এভাবে গণসংযোগ করা এবং দলের বই-পুস্তক বিতরণের চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নিতি ভঙ্গের শামিল। এছাড়াও তারা নেতাদের ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে দেখানোর অভিযোগ তুলেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বশেফমুবিপ্রবি শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ সমন্বয়ক রিয়াদ হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। আমরা চাই না ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি থাকুক। তাদের আগমনেই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং রাজনৈতিক পরিচয়ে যাতে কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সোচ্চার আছি।”

ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল-মিনহাজ বলেন, “ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা আসলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাই। এরপর আমাদের অবস্থান আমরা যেহেতু রাজনীতি চাই না সেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে কার্যক্রম করবে না বলে কথা দেয় তারা। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে এক কর্মচারীকে মারধরের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানাতে জামালপুর শহরে যাওয়ায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ক্যাম্পাসের বাইরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে প্রোগ্রাম করেছে। তাদের কথা রাখা উচিত ছিল। প্রশাসনের কাছে এটার জবাব চাই এবং তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তি চাই।”

ক্যাম্পসের বাহিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে দলীয় প্রোগ্রামের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলপন্থী শিক্ষার্থী ফারাবি হাসান সাকিল বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করলে তো আর সমস্যা নেই। যেহেতু সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেছে ক্যাম্পাসের ভেতরে কোন প্রোগ্রাম চলবে না। সে ক্ষেত্রে আমরা বাহিরে করেছি।”

ক্যাম্পাসে আগত ছাত্রদলের তিন জনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সোহান বলেন, “কেন এবং কি জন্য এসেছিলাম তা ভিসি স্যারকে অবহিত করতে এসেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীর কাছে একটি ভুল বার্তা ছিল যে আমরা ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত বা মিছিল মিটিং করতে এসেছি এজন্য তারা প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের বলেছে তারা শিক্ষার্থী বান্ধব বা লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কোনটাই পছন্দ করেন না। যারা এখানে থাকবেন তারা শিক্ষার্থীদের জন্য কথা বলবেন। আমাদের যে বর্তা ছিল তাদের দিয়েছি। তারাও তাদের মতামত দিয়েছে। তাদের আচরণে আমরা খুবই খুশি।”

তিনি সাংবাদিকদের মত প্রকাশের বিষয়ে আরো বলেন, “সাংবাদিকদের উপর শুধু ছাত্রদল না ক্যাম্পাসের অন্য কেউ যদি মত প্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সে ছাত্রদলের কর্মী হলে তার জন্য সাংগঠনিক ব্যবস্থা। প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা পর্যন্ত করব। এছাড়াও সাধারণ কোন শিক্ষার্থী যদি আপনাদের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রেও আমাদের ছাত্রদলের ভাইয়েরা আপনাদের পাশে দাঁড়াবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. সাদিকুর রহমান বলেন, “আমাদের এটা রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস। ব্যানারে প্রোগ্রাম করা বা রাজনৈতিক পরিচয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা নিষেধ। আগত ছাত্রদল নেতাদের এসব বোঝালে তারা বলে আমাদের এখানে ছাত্রদের কোনো বিষয় থাকবে না। এরপর তারা উপাচার্য স্যারের এখানে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আসে সবার মাঝে কথা হয়, আপনারাও দেখেছেন। পরে তারা চলে যায়।”
Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.