গত দুই দিন ধরে প্রযুক্তি-দুনিয়াতে আলোচিত এক নাম ডিপসিক। চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি ‘ডিপসিক এআই’ মডেল নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডিপসিক এআইয়ের কার্যক্ষমতা এরই মধ্যে চ্যাটজিপিটি, জেমিনি ও ক্লডের মতো বিভিন্ন এআই মডেলকে পেছনে ফেলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলেছে চীন।
ডিপসিক মূলত উন্নত এআই মডেল। চীনের হ্যাংজোভিত্তিক একটি গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে মডেলটি। ২০২৩ সালে গবেষণাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী লিয়াং ওয়েনফেং। ওপেন-সোর্সভিত্তিক এআই মডেলটির চ্যাটবট অ্যাপ অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে উন্মুক্তের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে চ্যাটজিপিটির তুলনায় বেশিবার নামানো হয়েছে। আর তাই ডিপসিক এআই মডেলটি সিলিকনভ্যালিসহ এআই দুনিয়াকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকেরা।
প্রথম থেকেই ডিপসিক সাশ্রয়ী মূল্য ও দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। আর তাই ডিপসিকের আরওয়ান মডেলটি অন্য সব এআই মডেলের চেয়ে কম খরচে ব্যবহার করা যায়। এর ফলে মেটা ও ওপেনএআইয়ের তৈরি জনপ্রিয় এআই মডেলগুলোর ওপর বেশ চাপ তৈরি হয়েছে। উন্নত মডেলের এআই তৈরি করতে ব্যয়বহুল এআই প্রসেসর প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ডিপসিকের সাশ্রয়ী মূল্যের এআই হার্ডওয়্যার ও মডেল প্রশিক্ষণের জন্য উদ্ভাবনী পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। ওপেন-সোর্স কোড থাকার কারণে ডেভেলপাররাও কম খরচে সহজে ডিপসিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
ডিপসিকের আগমনের পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে বলে মনে করেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্র চীনের উন্নত সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। শুধু তাই নয়, এআইখাতে চীনকে চাপে রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ডিপসিক সেই চাপকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের মডেল বাজারে এনে বড় ধরনের চমক তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে প্রশ্ন বিদ্ধ করছে। ডিপসিকের উত্থান যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। ডিপসিকের সাফল্যের কারণে এনভিডিয়া, মেটা ও মাইক্রোসফট সহ অনেক এআই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমে গেছে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এআই মডেলের তুলনায় কম খরচে চীনের এআই মডেলের উত্থান নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এর ফলে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের এআই খাতে বিনিয়োগের ধারা বদলে যেতে পারে। ডিপসিকের কারণে এআই প্রসেসর নির্মাতাদের মুনাফাও কমতে পারে।