অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধির নতুন সমাধান ‘বাউ সেফ ভেট’


বাকৃবি প্রতিনিধি
: বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরশীল। খামারিরা মুরগির বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য নিয়মিত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। সাধারণত, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের দুই সপ্তাহ পর মুরগি বিক্রি করা হলে সেটিতে ক্ষতিকর মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক থাকার আশঙ্কা কম থাকে। তবে অনেক খামারি এই নিয়ম অনুসরণ না করে, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার দিনই মুরগি বাজারে নিয়ে আসেন। এতে অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, যা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সসহ খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম ও তাঁর গবেষক দল উদ্ভিজ্জ নির্যাস থেকে তৈরি ‘বাউ সেফ ভেট’ (BAUSafe-Vet) নামে একটি বিকল্প সমাধান উদ্ভাবন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের অর্থায়নে গবেষণাটি ধারাবাহিকভাবে সাত বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে।

অধ্যাপক ড. শফিকুলের এই গবেষণা দলে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. আবু রায়হান পারভেজ, শাকিল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, তানভীর হাসান, নাজিবুল হক এবং আশরাফুল আলম।

গবেষণাটি নিয়ে ড. শফিকুল বলেন, 'বাউ সেফ ভেট (BAUSafe-Vet) এক ধরনের সল্যুশন বা উদ্ভিজ্জ নির্যাস, যা পোল্ট্রি শিল্পে অ্যান্টিবায়োটিক-মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করতে সক্ষম। নিম পাতার গ্রোথ প্রোমোটিং ইফেক্ট, ইমিউনো স্টিমুলেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রভাবসহ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এখানে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেই উপাদান দিয়ে এই সল্যুশন বা নির্যাস তৈরি করা হয়েছে।'

অধ্যাপক জানান, 'আমরা এখন এটা পেটেন্ট করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া আমরা এটার ল্যাব ট্রায়াল শেষ করেছি। দিনাজপুর ও গাজীপুরে ফিল্ড ট্রায়ালও সম্পন্ন হয়েছে। দিনাজপুরে ফিল্ড ট্রায়ালে এর ব্যবহারে আমরা দেখেছি প্রতিটি মুরগির ওজন প্রায় ৩৫০-৫০০ গ্রাম বেড়েছে, যা প্রতিটি মুরগির দেহের ওজনের প্রায় ৩০%। এর স্বাদ সাধারণ ব্রয়লারের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি মাংসের গুণগত মানও অনেক ভালো।'

সল্যুশনটির দাম সম্পর্কে ড. শফিকুল বলেন, '১০০ মুরগি পালন করতে প্রায় ২ লিটার সল্যুশন লাগে, যার দাম প্রায় ৪০০০ টাকা। কিন্তু মুরগির ওজন বাড়ায় এই দাম কয়েক গুণ লাভসহ উঠে আসে।'

তিনি আরো জানান, 'এটি ব্রয়লারের জন্য ১০০% নিরাপদ। এটি দেওয়ার পর দেখা গেছে কোনো রোগের উদ্ভব হয়নি, অর্থাৎ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একদমই নেই। সতর্কতা স্বরূপ মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও আর কোনো ওষুধ লাগে না, কারণ এ সময় পোল্ট্রি কোনো রোগেও আক্রান্ত হয় না।'

অধ্যাপক জানান, 'এই গবেষণা শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শিল্পেও একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। বাউ সেফ ভেট (BAUSafe-Vet) যদি সফলভাবে বাজারে আসে, তবে এটি পোল্ট্রি খামারিদের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে বিশ্ববাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।'

ড. শফিকুল বলেন, '২০২৫ সালে ৩১তম বাংলাদেশ ভেটেরিনারি শিক্ষা ও গবেষণা সমিতি (BASVER) কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে এই গবেষণার পোস্টার "High Performance Liquid Chromatography Analysis of Azadirachta in a Pathway to Drug Discovery for Safe Poultry Production in Bangladesh" নামে সেরা পোস্টার উপস্থাপনা পুরস্কার অর্জন করেছে, যা আমাদের গবেষণাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃতি প্রদান করেছে।'

নবীনতর পূর্বতন