একনজরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: ভৌগোলিক, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির বিবর্তন


ইশতিয়াক আহমেদ: 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ, যা ৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত। এর ভৌগোলিক অবস্থান, ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক কাঠামো এবং সামরিক কৌশলগত পরিকল্পনা দেশটিকে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ করে দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক বিকাশ, সামরিক শক্তির প্রসার, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি ও যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটির সামগ্রিক প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূগোল দেশটির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মার্কিন নেতারা দেশের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন না। তারা প্রশান্ত মহাসাগরের গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। সাহসী অভিযাত্রীরা অ্যাপালাচিয়ান পর্বতমালা পেরিয়ে মিসিসিপি নদী পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে এই নদী প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে মিলবে। তবে, এই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগর সম্পর্কিত তথ্য শুধুমাত্র স্পেন ও পর্তুগালের কাছে ছিল।

১৮০৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইজিয়ানা অঞ্চলটি কিনে নেয়। এটি দক্ষিণে মেক্সিকো উপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিমে রকি পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই অধিগ্রহণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন দ্বিগুণ করে এবং কৃষি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৮৬৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কেনে। তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট উইলিয়াম সুয়ার্ডের এই সিদ্ধান্ত প্রথমদিকে বিতর্কিত হলেও, কয়েক দশকের মধ্যে বিশাল সোনার খনি ও তেল আবিষ্কার মার্কিন অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করে।

১৮৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং কিউবা, পুয়ের্তো রিকো, গুয়াম ও ফিলিপাইন দখল করে। এই যুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বিস্তারের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।

কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৮৯৮ সালে স্পেনকে পরাজিত করে কিউবার সমস্যার সমাধান করা হয়েছিল। তবে, ১৯৬২ সালে কিউবান মিসাইল সংকট দেখা দেয়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছিল। টানা ১৩ দিন ধরে চলা উত্তেজনার পর, যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থানের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এটি স্নায়ুযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, যা মার্কিন নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

১৮৪৮-৪৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গোল্ড রাশ শুরু হলে প্রচুর অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসে। এই সময়ে মার্কিন সরকার "হোমস্টেড অ্যাক্ট" চালু করে, যার মাধ্যমে জনগণ বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে সরকারি জমিতে বসতি স্থাপনের সুযোগ পায়। এতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং কৃষি ও শিল্প বিপ্লবের প্রসার ঘটে।

১৮৬৯ সালে আন্তঃমহাদেশীয় রেলপথ উদ্বোধন করা হলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত সহজ হয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং নতুন শিল্প ও নগরায়নের পথ প্রশস্ত করে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে শুরু করে। ১৮৯৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের দখল মার্কিন সামরিক কৌশলকে আরও শক্তিশালী করে। ১৯০৩ সালে পানামা খালের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ লাভ করে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধি করে।

বিশ্বযুদ্ধের পর, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু হয়। মার্কিন নেতৃত্বে ন্যাটো গঠিত হয় এবং বিভিন্ন সামরিক জোট ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক বিকাশ, সামরিক শক্তির প্রসার এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি দেশটিকে আজকের বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি তার শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, কৌশলগত অবস্থান এবং একীভূত অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে বিশ্ব রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে। ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.