জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দেশের অন্তত ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি অনেকটাই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই বিভিন্ন সময় ওই সব ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এদিকে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাস খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদলের একটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন সরাসরি অথবা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের আড়ালে সক্রিয় রয়েছে। কিছু ক্যাম্পাসে তাদেরকে সরাসরি বিভিন্ন প্রোগ্রাম করতে দেখা যায়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দেশের অন্তত ১৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজসহ কিছু কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো হলো- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনের ব্যানারে ছাত্রদল ও শিবিরসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন মিছিল, সভা সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, পিকনিক, খেলাধুলার আয়োজনসহ নানা কার্যক্রম চালাতে দেখা যায়। কার্যক্রম রয়েছে বামধারার বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোরও। ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হলো।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ছাত্ররাজনীতিমুক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রদলের একটি কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল তুলকালাম কাণ্ড। সংঘর্ষে আহত হয় শতাধিক। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে।
জানা যায়, ছাত্রদল রাজনৈতিক কার্যক্রম অংশ হিসেবে গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কুয়েট ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করে। এর জবাবে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল বের করে। এই মিছিলে শিবিরের নেতাকর্মীদেরও অংশগ্রহণ ছিল বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির পথ ধরে সংঘর্ষে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সংঘর্ষের সময় ছাত্রদল ও যুবদল নেতাকর্মীদের অস্ত্র হাতে দেখা যায়। সংঘর্ষ কুয়েটের প্রধান ফটক ছাড়িয়ে সংলগ্ন রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে বহিরাগতদেরও সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের দাবি, ছাত্রদল ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে চায়। অন্যদিকে ছাত্রদলের দাবি- তারা কোনো ধরনের উত্তেজনা তৈরি করেননি, বরং তাদের ওপর প্রথম হামলা হয়েছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কাগজে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসারীরা। ২১ জানুয়ারি ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ (ইশা) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ‘ববি সম্মেলন ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই দিন ইশার ববি শাখার কমিটি ঘোষিত হয়েছে। ববি ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত হলেও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ছাত্রদল। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে এসেছে শিবিরের ববি শাখার সভাপতি। শিবির প্রকাশনা উৎসবেরও আয়োজন করেছে। এ ছাড়া ববিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সরব উপস্থিতি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ টি এম রফিকুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার রাজনীতি করতে হলে সেই দাবিও শিক্ষার্থীদের থেকে আসতে হবে।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
৫ আগস্টের পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি, খেলাধুলার আয়োজন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম চলমান। সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষক-কর্মকর্তারা কোনো ধরনের রাজনীতিতে জড়াতে পারবে না। তাই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের রাজনীতি করা নিষিদ্ধ। তবে ছাত্রদের ব্যাপারে এ বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। তাই তারা অনেকেই ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করছে।
৫ আগস্টের পর ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ভিসির আমলে একটি আদেশে সেটি হয়েছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে সিন্ডিকেটে তুলতে হয়। আমার আমলে সেটি হয়নি। তাই এ বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে মনে করছি।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
গত ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রদলের ব্যানারে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। পরে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ও কর্মচারীদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ১১ ডিসেম্বর গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লিখিত আদেশ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ১৩ নভেম্বর রুয়েট উপাচার্য, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক এবং গবেষণা ও উন্নয়ন পরিচালকের সঙ্গে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিনিধিদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৪ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় রুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে হাবিপ্রবি ছাত্রদলের কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বটতলায় ছাত্রশিবির প্রকাশনা উৎসব করে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এক রিসোর্টে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুই দিনের প্রকাশনা উৎসব আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। এর আগে গত রবিবার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. আবুল হাসান ও সেক্রেটারি মেহেদী হাসান নাঈমের অনুমোদনক্রমে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. মুবাশ্বির সালেহীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদলের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রদল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২১ জানুয়ারি ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন’ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করে। ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধন করে আয়োজন করে তারা। ১০ নভেম্বর দলটির কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে শেকৃবি শাখা ছাত্রদল। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মৌনমিছিল করের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বিচ্ছিন্নভাবে সব ছাত্রসংগঠনেরই কিছু কার্যক্রম রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাদের আমরা অনুমতিও দিই না, আবারও তাদের কোনো অনুষ্ঠানে বাধাও দিই না। শিক্ষার্থীরা চাইলে আমরা আবার ছাত্ররাজনীতির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেব।’
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে তো আর মারামারি-কাটাকটি বন্ধ হবে না। তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের কোনো কারণ দেখি না। কিন্তু ছাত্ররাজনীতির নামে বর্তমানে ক্যাম্পাসে যা হচ্ছে তা বন্ধ করা উচিত। আবার অনেক শিক্ষকও নিজেদের স্বার্থের জন্যও এসব করে থাকেন। তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রশ্ন সামনে আনা ঠিক না। ছাত্ররাজনীতির নামে মারামারি-কাটাকটি বন্ধ করতে কি কি কাজ করা দরকার সেটির উদ্যোগ নিতে বললেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে কি থাকবে না কিংবা থাকলে কোন ফরম্যাটে থাকবে সেটি ছাত্ররাই নির্ধারণ করবে। এক্ষেত্রে তারা চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। তাদের বিষয়টি আমরা প্রাধান্য দিচ্ছি।
প্রায় দেড় যুগ ধরে শিক্ষা আন্দোলন, ছাত্ররাজনীতি এবং ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছেন এমন একজন সংবাদকর্মী বলেন, “বাংলাদেশে ঐক্য ও ন্যায্যতার সমাজ-রাজনীতি তৈরির অনন্য সুযোগ এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে। কিন্তু সরকার অন্য বিষয়গুলোতে যতটা গুরুত্ব দিয়েছে শিক্ষার ব্যাপারে তা দেয়নি। শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে সিরিয়াস কাজ করেনি। অথচ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষার মান এবং শিক্ষার পরিবেশে যে দুর্যোগ ঘটে গেছে তা থেকে পুনরুদ্ধারে এ দুইটি পদক্ষেপ জরুরি ছিল।”
তিনি বলেন, “দখলদারিত্ব আমাদের শিক্ষাঙ্গনের পুরনো অসুখ। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসগুলোতে একনায়কতান্ত্রিক শাসন ও ছায়া প্রশাসন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই নীতিবান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সিংহভাগ ছাত্রলীগের পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতিও ক্যাম্পাসগুলোতে চান না। আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক বন্দোবস্ত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাটাই হয়তো সবচেয়ে ভালো সমাধান হতো। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং আন্ত:দলীয় প্রতিযোগিতায় সুস্থ ধারা বিদ্যমান নেই। সামষ্টিক জ্ঞানভিত্তি তলানিতে। তাই শিগগিরই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাটা কঠিন, এবং উচিতও হবে না। শিক্ষাঙ্গনে মৌলিক জ্ঞানের চর্চা ও আন্তর্জাতিক সংযোগ ও বোঝাপড়া বাড়লে এবং সত্যিকারের সহাবস্থানের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হলে প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি এক সময় বন্ধ হয়ে যাবে। তার জায়গা নেবে শিক্ষা আন্দোলন এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্পষ্ট কার্যক্রম।”