ঈদ নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

ঈদ নিয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষকদের ভাবনা
ক্লাস কিংবা পরীক্ষা নেয়ার ধকল, একাডেমিক বা প্রশাসনিক ভবনের এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে দৌড়াদৌড়ি, ডরমেটরি কিংবা বাসা থেকে ক্যাম্পাসে ছুটোছুটি, দিনের শেষে প্রশাসনিক কাজে বুদ হয়ে থাকা, অতঃপর শেষ রাতে সেমিস্টার বা সিটি পরীক্ষার খাতা দেখা কিংবা পরবর্তী দিনের কাজের পরিকল্পনা। এভাবেই বছর কাটে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শিক্ষকদের। দিনের শেষ লগ্নে কলিগদের সাথে চায়ের আড্ডা কিংবা পরিবারের সদস্যের সাথে বসে একটু আড্ডা দেয়ার জন্য মন চাইলেও হয়তো হয়ে ওঠে না সবসময়। এতো হাসফাসের ভিড়ে ছুটে চলা মন প্রহর গোনে কবে ফিরে যাওয়া হবে ক্ষণিকের জন্য নিজের বেড়ে ওঠা নীড়ে।

এক সময় অপেক্ষার পালা শেষ হয়, বছর ঘুরে চলে আসে আরেকটা ঈদ। সময় আসে ব্যস্ততার রুটিন ফেলে কিছু অলস দুপুর কাটানোর, সঙ্গে প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গ। সে আশাতেই আমরা টিকিটের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াই, বিস্তর ধাক্কাধাক্কি হয়। হৃৎপিণ্ড ছলকে ওঠে। যাচ্ছি তাহলে এবার? 

এবারের ঈদ নিয়ে কী ভাবছেন নোবিপ্রবির শিক্ষকেরা, তা তুলে ধরেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি— আব্দুল্লাহ আল তৌহিদ। 

প্রযুক্তির প্রভাবে ঈদ আনন্দ এখন ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে গেছে

- ড. মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম 
অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, নোবিপ্রবি।
প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে বর্তমান প্রজন্ম অনেকটাই ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে পড়েছে। আগের মতো ঈদ উদযাপন করে না বলেই মনে হয়। প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাওয়া, একসাথে ঈদের নামাজ পড়া, বা খোলা মাঠে খেলাধুলার সেই রঙিন দিনগুলো এখন অনেকটাই ম্লান।
ছোটবেলার একটা ঘটনা এখনো খুব বেশি মনে পরে। একবার ছোটবেলায় নৌকায় করে গ্রামের বাজারে গিয়েছিলাম ভাইয়াদের সাথে। বাজারে পৌঁছে ভাইয়েরা আমাকে নৌকায় রেখে গিয়েছিল। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর যখন ওদের ফিরতে দেরি দেখে ভয় পেয়ে যাই, তখন আমি ছোট্ট শিশু মন নিয়ে একাই নৌকা চালিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হই। বয়স কম ছিল বলে ভালভাবে নৌকা চালাতে পারতাম না, তবুও কোনরকমে বৈঠা দিয়ে চালানোর চেষ্টা করছিলাম। পরে আমার ভাইয়েরা নির্ধারিত স্থানে এসে আমাকে না পেয়ে খুব চিন্তায় পড়ে যায় এবং শেষে অন্য একটি নৌকা নিয়ে আমাকে খুঁজে পেয়ে উদ্ধার করে। ঘটনাটা যদিও ঈদের আগের দিনের, তবে ঈদ এলেই সেই ভয়, সাহস আর ভালোবাসায় ভরা মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে।
 

ঈদ আনন্দ মাঝে মাঝে বিষাদেও রূপ নেয়ার শঙ্কা থাকে

- ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম মাসুদ 
অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, নোবিপ্রবি।

 একবার ঈদের পরেরদিন একটা দাওয়াত খেয়ে যাচ্ছিলাম বাইকে করে। আমি ছিলাম বাইকের পিছনে।  তখন রাস্তার কাজ চলছিল। আমরা রাস্তা ক্রস করছিলাম।  হঠাৎ করে বাইক এবং সিএনজি মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। তেমন বড় কোন দুর্ঘটনা না হলেও এখনো ঈদ আসলে এই স্মৃতি মনে পরে।

আমি যখন খুব ছোট ছিলাম তখন শীতকাল ছিল।  গোসল করার জন্য অনেক সময় গরম পানি থাকতো বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজের ব্যস্ততার কারণে গরম পানি থাকতো না তখন গোসল করাটা ছিল খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং। ওই স্মৃতিটা এখনো খুব বেশি মনে পরে। এছাড়াও বাবা, চাচাতো ভাইবোন বা কাজিনদের সাথে একসাথে ঈদগাহে যাওয়াটা খুব বেশি মিস করি। 

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ঈদ আনন্দের রীতি ভিন্ন হলেও অনুভূতি এক

- ড. ফাহাদ হুসাইন 

সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসী বিভাগ, নোবিপ্রবি।

এক প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সময়কাল আরেক প্রজন্মের থেকে আলাদা। বর্তমান প্রজন্মের ঈদ উদযাপনের ধরন কিছুটা বদলেছে, যুক্ত হয়েছে জৌলুস। সাধারণ পটকা বাজির জায়গা দখল করেছে ব্যয়বহুল আতশবাজি। আগের মতো গ্রামে গিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতা কমেছে। প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক পরিবর্তন, এবং ব্যস্ত জীবনধারার কারণে অনেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তবে আমার কাছে মনে হয় উদযাপনের রীতি কিছুটা বদলে গেলেও আনন্দের অনুভূতি একই রয়েছে।

প্রযুক্তির প্রভাবে সরাসরি সাক্ষাতে হৃদ্যতাপূর্ণ মুহূর্তের অপ্রাপ্তি বেড়েছে। অপরদিকে দূর দূরান্তের বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় সহজ হয়েছে। প্রিন্টেড ঈদ কার্ড বা মোবাইল ফোনের বেসিক মেসেজের জায়গা দখল করে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকে ক্যানভা কার্ডে শুভেচ্ছা বিনিময়। পরিবারের সবাই মিলে টিভির সামনে বসে বিনোদন উপভোগ বদলে গেছে ইউটিউব বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশনে।

শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের এই ঈদে বার্তা হচ্ছে:
ঈদ শুধু আনন্দ নয়, এটি আত্মশুদ্ধি ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চার সময়। প্রযুক্তির মাঝে হারিয়ে না গিয়ে পরিবার, সমাজ, প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের সাথে সময় কাটানো উচিত। জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা ও সহমর্মিতার চর্চাও একজন প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
 পবিত্র ঈদে সকল শিক্ষার্থীর জন্য দোয়া করি—তারা যেন সবাই সুস্থ, নিরাপদ ও আনন্দময়ভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে। যারা বাড়িতে যাচ্ছে, আল্লাহ যেন তাদের যাত্রা নিরাপদ করেন এবং ঈদের ছুটি শেষে সবাইকে ভালোভাবে ও হাসিমুখে আবার ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনেন। আল্লাহ যেন তাদের জীবনে শান্তি, সফলতা এবং কল্যাণ দান করেন—এই প্রার্থনাই করছি।

ঈদ মোবারক!

নবীনতর পূর্বতন