সুন্দরবনে ২৩ বছরে ৩৪ বার আগুন


বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে গত ২৩ বছরে ৩৪ বার আগুন লেগেছে। সবগুলো ঘটনাই ঘটেছে পূর্ব সুন্দরবন এলাকায়। এবারও আগুন জ্বলছে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের কলমতেজী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ি এলাকায়। 

এর আগের আগুনটি ছিল ২০২১ সালের মে মাসে পূর্ব সুন্দরবনের দাসের ভারানির পাশের অঞ্চলে। ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করেছে পূর্ব বন বিভাগ।

উল্লেখযোগ্য আগুনের ঘটনা:


২০০২ সালের ২২ মার্চ: শরণখোলা রেঞ্জের কটকাতে প্রায় এক একর ছন বন পুড়ে যায়।
২০০৪ সালের ২৫ মার্চ: চাঁদপাই রেঞ্জের নাংলি ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় তিন একর বনভূমি পুড়ে যায়।
২০০৫ সালের ৮ এপ্রিল: ধানসাগর স্টেশনের অধীন কদলতেজী এলাকায় তিন একর বন পুড়ে যায়।
২০১৬ সালের ২৭ মার্চ: চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ফরেস্ট ক্যাম্পসংলগ্ন এলাকায় আগুন লাগে।
২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি: ধানসাগর টহল ফাঁড়ি এলাকার প্রায় চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।
বন বিভাগের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩৪টি আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৩ লাখ ৫৩৩ টাকা। তবে প্রাণী-বৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষতি ধরা হয় আনুমানিক হিসাবে, যা প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না।

তদন্ত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ আগুনের সূত্রপাতের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতা। বিড়ি-সিগারেট বা মৌমাছি তাড়াতে জ্বালানো মশাল থেকেই সবচেয়ে বেশি আগুনের সূত্রপাত হয়।

সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ ভাগ। এখানে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখি রয়েছে।

এদিকে, শনিবার সকালে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পোহাতে হচ্ছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানির উৎসের অভাব রয়েছে। খালে জোয়ার এলে নৌপথে পানির পাম্প নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা ফরেস্টার বিপুলেশ্বর দাস বলেন, ‘বনের খাল থেকে প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে গহীন বনের মধ্যে আগুন জ্বলছে। আশেপাশে পানির কোনো উৎস নেই। খালে জোয়ার হলে নৌপথে পানির পাম্প নেওয়া হবে।’

ধানসাগর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য পান্না মিয়া ও স্থানীয় ফজলুর রহমান বলেন, ‘সকালে সুন্দরবনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপারবিল এলাকায় বনের মধ্যে আগুনের ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। বিষয়টি ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম বলেন, ‘সুন্দরবনে আগুন লাগার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.