দুঃখপ্রকাশ করলেন মাহফুজ আলম


গতকাল বুধবার (১৪ মে) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের সামনে গিয়েছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। সেখানে কথা বলার এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে একটি প্লাস্টিকের পানির বোতল ছুড়ে মারা হয়। পরে বোতল ছুড়ে মারার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে চলে আলোচনা-সমালোচনা।

বোতল ছুঁড়ে মারা সেই ঘটনা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তিনি বলছেন, গেল সপ্তাহজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা (বোতল ছুড়ে মারা) হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। তাই আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাতে ৯টার পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজের ফেসবুক পেজে দীর্ঘ পোস্টে এসব কথা বলেন তিনি।

পোস্টে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ বেলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলোর ন্যায্যতা বিচার করবেন শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রণালয়। আরো যুক্ত থাকবেন ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জোরালো ভূমিকা রাখা ও সম্মুখ সারিতে নেতৃত্ব দেয়া জবি শিক্ষার্থীদের দাবির একটি ফলপ্রসূ সমাধানে আসতে আমি ভিসি স্যার ও অন্যান্যদের সাথে বসেছিলাম। 

‘‘গত পরশু রাত্রে যখন এসব দাবি নিয়ে জবি থেকে আমাকে জানানো হয়, তখন তাদেরকে আমি গতকাল রাত ৯টায় আমার বাসায় আসার আমন্ত্রণ জানাই। কিন্তু, গতকাল সকালে তারা আন্দোলনে নামেন এবং যমুনার কাছাকাছি পৌঁছে যান। কাল দুপুর থেকেই ভিসি স্যারের সাথে আমি নিয়মিত যোগাযোগ করেছিলাম। শেষপর্যন্ত রাতে এক ঘণ্টা ধরে তিনটা টকিং পয়েন্ট নির্ধারণ করে আমি ভিসি স্যার ও শিক্ষকদের সাথে কাকরাইল মোড়ে যাই।’’

তিনি বলেন, সেখানে মিডিয়ার লোকজন শিক্ষার্থীদের থেকে ৫০ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু, আমি ভিসি স্যারকে বললাম, আমি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে কথা বলব। সেখানে যাওয়ার পর একটা গ্রুপ স্লোগান দেয়। আমি বিব্রত না হয়ে, নিজের দায়িত্ব পালনে কথা বলা শুরু করি। পূর্বনির্ধারিত টকিং পয়েন্ট অনুযায়ী পুলিশের বাড়াবাড়ি অথবা স্ব-উদ্যোগে ‘উসকানি’মূলক কিছু করলে ক্ষমাপ্রার্থনা ও বিভাগীয় তদন্তের কথা বলতে গিয়েছিলাম। তখনই বোতল নিক্ষেপ করেন একজন শিক্ষার্থী। ঐ শিক্ষার্থী কেন এবং কার মদদে এ অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করলেন, তা আশা করি প্রশাসন দ্রুতই খতিয়ে দেখবে। 

‘‘তারপর আমি হতাশা নিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। তখন স্যারদের সাথে আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা ব্যক্ত করি। স্যাররাও এ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহব্যাপী সোশাল মিডিয়ায় একটি দলের নিয়মিত আক্রমণ ও হত্যার হুমকির কারণে ন্যায্যভাবেই অনুমান করেছিলাম এটা হুমকিদাতা দলের কাজ হতে পারে। আমার হতাশা ও ক্ষুদ্ধতা কাউকে আঘাত করলে আমি আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করছি।’’

পোস্টে তিনি দাবি করেন, আমার বক্তব্য ছিল, এ আক্রমণের ফলে ন্যায্য দাবির আন্দোলন বিতর্কিত হল। আমি চেয়েছিলাম, জবির আবাসন সমস্যা যেন দ্রুত সমাধান হয়। পরবর্তীতে ৫০ মিটার দূরত্বে আমি আরেকটা সাংবাদিক সম্মেলন করি। আমার অফিসিয়াল বক্তব্য, আন্দোলনের সাথে একাত্মতা, দাবি পূরণের রোডম্যাপ ও পুলিশি হামলার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস সেখানে আপনারা দেখতে পাবেন। জবির শিক্ষার্থী ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের উপর পুলিশি হামলার নিন্দা আমি আবারো জানাচ্ছি। জবি’র শিক্ষার্থীদের আবাসনের দাবি ন্যায্য।আশা করি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান মিলে দ্রুতই একটি যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ সমাধানে আসবেন। 

তিনি বলেন, জবি থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দুইজন শিক্ষার্থী ভাই শহীদ হয়েছেন এবং অনেক ভাই-বোন আহত হয়েছেন। জবি’র ভাইবোনদের বলব, আপনাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্যই আমি গিয়েছিলাম। জুলাই আমাদের মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি করেছে। আশা করি, এ বন্ধন কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ছিন্ন হবে না। আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে, ঝুঁকিপূর্ণ হলেও আপনারা আমাকে সাথে পাবেন। 

‘‘গতকাল রাতে এসেই আমি ডিএমপি কমিশনারকে বলে দিয়েছিলাম, যাতে জোরপূর্বক জবি শিক্ষার্থীদের সরানো না হয়। তাদের উপর যেন কোনোরকম আক্রমণ না চালানো হয়। সবার সুমতি হোক। ভুল হলে তা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে আমরা এগোতে চাই।’’

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.