নোবিপ্রবিতে সেশনপ্রতি ঝরে পড়েন  প্রায় ৫% শিক্ষার্থী

নোবিপ্রবিতে সেশনপ্রতি ঝরে পড়েন  প্রায় ৫% শিক্ষার্থী

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ভর্তি-উৎসবের আলো নিভে যাওয়ার গল্প বাড়ছে নীরবে। ভর্তি পরীক্ষার কঠিন প্রতিযোগিতা জিতে যারা ক্যাম্পাসে প্রথম দিন পা রাখেন—চোখে স্নাতক গাউনের স্বপ্ন, মনে নতুন জীবনের উচ্ছ্বাস—তাদের একটি অংশ শেষ পর্যন্ত ডিগ্রি হাতে নিতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য বলছে, নোবিপ্রবিতে প্রতি সেশনে গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ না করেই ঝরে পড়েন। কেবল ২০১৯–২০ সেশনেই পাশের হার নেমে আসে ৯০.০৮%—অর্থাৎ প্রায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ডিগ্রি সম্পন্ন করতে পারেননি, যা আগের কয়েকটি সেশনের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ঝরে পড়া নির্দেশ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ সেশনে পাশের হার ছিল ৯৭.৮৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সেশনে ৯৬.৬৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সেশনে ৯৫.৮৩ শতাংশ। তবে ২০১৯-২০ সেশনে তা নেমে আসে ৯০.০৮ শতাংশে। অর্থাৎ সেশন প্রতি গড়ে প্রায় ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট, মাদক গ্রহণ,পারিবারিক সমস্যা, মানসিক চাপ কিংবা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।এছাড়াও মাদকে আসক্ত হয়ে উল্লেখযোগ্য হারে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়ে ফলে সঠিক সময়ে পাশ করে বের হতে পারে না।ভর্তি-সময়কার যেসব চোখে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল ছবি ভেসে উঠেছিল, বাস্তবতার নির্মমতা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে অনিশ্চিত জীবনের পথে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের গবেষনা মতে, এই ঝরে পড়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং জাতীয়ভাবে মেধা ও মানবসম্পদের অপচয়। এ হার কমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী মানসিক পরামর্শ সেবা, আর্থিক সহায়তা ও স্কলারশিপ কর্মসূচি, একাডেমিক গাইডলাইন ও মেন্টরশিপ কার্যক্রম আরও জোরদার করা জরুরি। তা না হলে ভর্তি-দিনের উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো বারবার নিভে যাবে, আর সমাবর্তনের কোলাহলের আড়ালে হারিয়ে যাবে অসংখ্য অসমাপ্ত গল্প।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন— আমরা শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করার জন্য বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল ট্রেনিং করাচ্ছি, যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা থাকলে তারা তার সমাধান করতে পারে। আমরা প্রতিটি বিভাগে ছাত্র-উপদেষ্টা নিয়োগ দিচ্ছি, যেন শিক্ষার্থীরা তাঁদের ব্যক্তিগত যেকোনো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং সমাধান করতে পারে। এছাড়াও আমরা ভবিষ্যতে যেসব শিক্ষার্থীর ফলাফল খারাপ হয়, তাঁদের অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেব।

নবীনতর পূর্বতন