সাত দফা দাবিতে ৪৮ ঘন্টা ধরে আমরণ অনশন করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নয় শিক্ষার্থী। অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে বাম সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করছে। ৯ জনই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৩ জনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সামনে এই অনশন শুরু হয়।
অনশনরত ৯ শিক্ষার্থী হলেন, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, সংগীত বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি জশদ জাকির, স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, ইংরেজি বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, একই বিভাগের দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহ জান, বাংলা বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ধ্রুব বড়ুয়া, মার্কেটিং বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদার, সংগীত বিভাগের ২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে এবং বাংলা বিভাগের ১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা।
দীর্ঘক্ষণ অনশনে থাকায় ৩ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে সুমাইয়া সিকদার, ধ্রুব বড়ুয়া, জশদ জাকিরকে মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অনশনরত ৯ জনের মধ্যে ৭ জনকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। অনশনে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে তাদের দাবি মোতাবেক কোন দাবি পূরণ করনের আশ্বাস না দেওযায় শিক্ষার্থীরা এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, গতকাল দুই উপ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টাসহ আরও কয়েকজন শিক্ষক এসেছিলেন। কিন্তু তারা যে আশ্বাস দিয়েছে সেটা পর্যাপ্ত না। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাবো। প্রয়োজনে মারা যাবো। আমাদের দাবি অনুযায়ী প্রক্টরিয়াল বডিকে পদত্যাগ করতে হবে এবং শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি হলো- ব্যর্থতার দায়ে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, আহত শিক্ষার্থীদের পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশ, নিরাপত্তাহীন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য অবিলম্বে মানসম্মত ভ্রাম্যমাণ আবাসনের ব্যবস্থা কর এবং আবাসনচ্যুত শিক্ষার্থীদের মালামাল উদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ঘিরে বিশেষভাবে চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের সকলপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং নিরাপরাধ এলাকাবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা, বৈপরীত্যমূলক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে উভয়পক্ষের অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন করা এবং ন্যূনতম তিন মাস পরপর মিটিং করা এবং সিন্ডিকেটকর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের রোডম্যাপ প্রকাশ ও বাস্তবায়ন করা।
চবি মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল কাশেম জানান, অনশনরত শিক্ষার্থীরা যদি এখন অনশন না ভাঙ্গে, তাহলে শিক্ষার্থীদের প্রাণ নাশের মত ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের অবস্থা ক্রমে অবনতির দিকে যাচ্ছে। একটা পর্যায়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে তাদেরকে চিকিৎসা দেওয়ার মত অবস্থা থাকবেনা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান গতকাল জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের অনশনের কথা শুনে গতকাল তাদের সাথে প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনা করার পরেও তাদের অনশন ভাঙাতে পারিনি। বারবার বলেছি আমরা আগামী রবিবার বিকাল তিনটায় তোমাদের সাথে বসে তোমাদের সকল দাবী দাওয়া শুনবো। কিন্তু তারা তাদের কথার উপর অটল আছে। তারা বারবার বলছে প্রক্টরের পদত্যাগ এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করতে। বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটা নিয়ম আছে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তও করেছি। তাহলে আমরা আবার কীভাবে ওদের দাবি অনুযায়ী কাজ করবো? আমাদের তদন্তের রিপোর্টে যদি প্রক্টর দোষী হয় তাহলে অবশ্যই তাকে অপসারণ করা হবে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেটা মানছেন না। প্রশাসন আজকে দুপুরের পর আবারও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলবে বলে জানা গেছে।
