গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর রদবদল হয়েছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। তবে এ অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান স্বত্বেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বেশ কিছু পদে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন একাধিক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহাল তবিয়তে থাকা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা, কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ হেল কাফী, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মানবসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. খন্দকার হাসান মাহমুদ।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান, আন্দোলনে যেতে বাধা ও হুমকি প্রদান, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের তথ্য দেওয়াসহ গত ১৫ ও ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে অধ্যাপক বশির আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি ও অধ্যাপক নিগার সুলতানা বিগত আওয়ামীপন্থী প্রশাসনের সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগী ছিলেন।
অধ্যাপক বশির আহমেদ আওয়ামীপন্থী প্রভাবশালী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ থেকে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন এবং তিনি সংগঠনটির সদস্যসচিব ছিলেন। গত ১৫ জুলাই হামলার ঘটনায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে। এছাড়া সেদিনের ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। ইতোমধ্যে এ মামলায় তাদের নাম উল্লেখ করে সহযোগিতা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
এদিকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি আওয়ামী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। পূর্বে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি সহ একইসাথে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদেরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ বিগত প্রশাসনের পুরস্কার স্বরূপ নবনির্মিত কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক কাফি।
অন্যদিকে, অধ্যাপক নিগার সুলতানাও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন নির্বাচিত হন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পুরোটা সময়ই তিনি নির্বিকার ছিলেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এ তালিকায় আরও আছেন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আহমেদ রেজা, পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আওলাদ হোসেন। তাদের প্রত্যেকেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। একইসাথে জুলাই গণঅভ্যুত্থান চেতনার বিপক্ষে অবস্থান ছিল তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, "যেখানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা সব দায় স্বীকার করেই দেশ ত্যাগ করেছে, সেখানে তাদের দলেরই একজন লোক হয়ে এসব পদে বহাল থাকা অনুচিত। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর কেউ প্রশ্ন তোলার আগে তাদের নিজ থেকেই এসব পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত ছিল"।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, "ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকরা তাদের পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছে। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের পদ থেকে অবদমন ও দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিত। শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ থাকলে তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি"।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, "যারা বিভিন্ন পদে ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়েছেন তারা মনোনীত ব্যক্তি হিসেবেই এসব পদে এখনও বহাল রয়েছেন তবে এমন স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগী হওয়া সত্ত্বেও এখনও এসব পদ ধরে রাখা লজ্জার"।