মাইশা হত্যার দফারফা দশ লাখে , প্রশাসনিক অদক্ষতাকে দুষছেন শিক্ষার্থীরা

মাইশা হত্যার দফারফা দশ লাখে , প্রশাসনিক অদক্ষতাকে দুষছেন শিক্ষার্থীরা।

মাইশা হত্যার দফারফা দশ লাখে , প্রশাসনিক অদক্ষতাকে দুষছেন শিক্ষার্থীরা

ববি প্রতিনিধি : বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীর বাস চাপায় নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস এজেন্সির থেকে শিক্ষার্থীরা প্রথমে তিন কোটি টাকা ক্ষিতিপূরণ দাবি করে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ ট্রাভেল এজেন্সি মাত্র ১০ লাখ টাকায় মাইশার স্বপ্নের দফারফা করেছে। এর জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অদক্ষতাকে দায়ী করছেন। 

পরিসংখ্যান বিভাগের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ডিসি অফিসের মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা ছিলো নিরব দর্শকের। উপাচার্য কোন কথাই বলেননি, দাবি আদায়ে তারা সোচ্চার কোন ভূমিকায় রাখেননি৷ আমরা এক পর্যায়ে রাগ হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বারবার অনুরোধ করে মিটিংয়ে বসতে বাধ্য করেন।

এছাড়াও আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের একপক্ষ অভিযোগ তুলছেন প্রশাসনিক দুর্বলতার কারনেই তীব্র জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে৷ তিনদিনের সড়ক অবরোধে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় দূরপাল্লার বিভিন্ন ধরনের পরিবহনে যাত্রীরা হয়রানীর শিকার হয়েছে৷ ঘন্টার পর ঘন্টা যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে৷ তাছাড়া আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যবহারে সন্মানহানি হয়েছে অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের৷ এমন দুর্ভোগে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের৷ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পরিচয় দিলেও শিক্ষার্থীর গাড়ি বাইকের হেডলাইট পর্যন্ত ভেঙে ফেলেছে আন্দোলনকারী পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷

শুক্রবার দিবাগত রাতে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মালিক কর্তৃপক্ষের সাথে বিভাগীয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছয় ঘন্টার মিটিংয়ে নানা বাকবিতন্ডায় ও দফায় দফায় আলোচনা করেও দাবি অনুযায়ী ক্ষতি পূরণ আদায় করতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিসংখ্যানের শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিটিংয়ে উপস্থিত থাকা এক শিক্ষার্থী বলেন, উপাচার্য মিটিংয়ে কোন কথা বলেনি৷ এছাড়াও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের অপরিপক্কতা দাবি আদায়ে ব্যর্থতা সৃষ্টি করেছে৷ এছাড়া ওখানে দশটি দাবির মাত্র দুটি দাবিকে প্রাধান্য দিয়েছেন৷ একটি মামলা অপরটি ক্ষতিপূরণ৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের আন্দোলন বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে৷ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ  ছাড়ায় নিজেরে যেয়ে সেখানে নুন্যতম দাবি আদায়ের কথা বলতে পারি নি৷ যদিও জীবনের কোনো ক্ষতিপূরন হয় না তবুও শিক্ষার্থীদের দাবির আশে পাশেও নেই এই প্রতিশ্রুত পরিমান, যা আসলেই হতাশাজনক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ইহতাশামুল হক  রিফাত বলেন, টানা ৩ দিন মহাসড়ক অবরোধ করে সীমাহীন জনদুর্ভোগে ছিল এই অঞ্চলের জনগন কিন্তু নিতান্ত ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মাইশা প্রাণের সাথে বেইমানি করছে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ও  শিক্ষার্থীরা ( দীপন নন্দী, আওলাদসহ অনেককেই)।  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ৯৯% শিক্ষার্থী পরিসংখ্যানের বিভাগের শিক্ষার্থীদের এমন আচরণকে পূর্বপরিকল্পিত রচনা বলে অ্যাখায়িত করেছে। প্রতি হলে হলে দোকানে সামনে এমনকি বিভিন্ন জায়গা থেকে সবাই একটাই আলোচনা হচ্ছে হয়ত ওরা আগেই টাকার বিনিময়ে বিষয়টাকে ঠিক করে রেখেছিল। নাহলে মাইশার এই তরতাজা রক্তের দাম কিভাবে ১০ লক্ষ  টাকা হয়?। এটাই নিতান্তই একটা গর্হিত কাজ করে পরিসংখ্যান বিভাগের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় লিংর্কাস নাম পেজ থেকে মাইশা হত্যায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে   শিক্ষার্থী মাইশা হত্যায় যে সিদ্ধান্ত প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বাসমালিক সমিতি নিয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ৮০% ভোট পড়েছে আরো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত এবং ১৭ % শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট এবং মাত্র ১% শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট৷

আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের অবমূল্যায়ণ করেছে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ এনেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাংবাদিক৷ ঢাকা টাইমসের প্রতিনিধি ববি মাসুদ রানা বলেন, সাংবাদিক পরিচয় দিলেও প্রক্টর অফিসের একটি মিটিংয়ে আমাকে বের করে দিয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় সাধারণ মিটিংয়ে সাংবাদিকরা উপস্থিত হতে পারছে না৷ 

এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আওলাদ হোসেন রাজু বলেন, এদেশে দাবি আদায় করতে হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হবে এটা স্বাভাবিক বিষয়৷ শিক্ষার্থীদের উগ্রতা ও গাড়ির লাইট ভেঙ্গে  এবং সাংবাদিকদের মিটিংয়ে ঢুকতে না দেওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি৷তবে লাইট ভাঙ্গার বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে৷

এ বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভগের চেয়ারম্যান আহসান হককে তার নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উগ্রতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিল৷  আমি কোন ধরণের আন্দোলনের পক্ষে না৷ শিক্ষার্থীদের যার উগ্রতা করেছে সেটা দেখার এখতিয়ার আমার না৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে উঠিয়ে আনতে আমাকে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে কোন বার্তা দেওয়া হয়নি৷ এজন্য একটি গ্যাপ তৈরী হয়েছে৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাহাত হোসেন ফয়সাল বলেন, জনদুর্ভোগের বিষয়টি সত্যই দুঃখজনক৷ আমাদের শিক্ষার্থী মারা গেছে, সেহুতে শিক্ষার্থীদের আবেগ রয়েছে ৷ সবকিছু মিলিয়ে আমার চেষ্টা করেছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করতে৷ বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ডিনসহ সকল শিক্ষকদের অংশগ্রহণে কীর্তখোলা হলে মিটিং হয়েছে৷ যদি কেউ দাবি করে প্রশাসন থেকে কিছু জানানো হয়নি তবে সেটা ভুল৷

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি৷
Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.