ময়মনসিংহের ফুলপুরের জাইমুন ইসলাম কৃষি গুচ্ছে দেশসেরা

ময়মনসিংহের ফুলপুরের জাইমুন ইসলাম কৃষি গুচ্ছে দেশসেরা

বাকৃবি প্রতিনিধিঃ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায়  দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রাঙ্গণে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কে বি) কলেজের শিক্ষার্থী ফুলপুরের জাইমুন ইসলাম। তিনি ৫১ হাজার ৮১১ জন পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। জাইমুনের এই অর্জনে খুশি তার পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্খীরা।

জাইমুন ইসলামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায়। জাইমুনের শিক্ষাজীবন, পারিবারিক জীবন ও কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যাত্রা নিয়ে লিখেছেন আসিফ ইকবাল।

জাইমুন ময়মনসিংহের ফুলপুরের পয়ারীর গোকুল চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। পরবর্তীতে বাকৃবি চত্বরের কে বি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরিবারের দুই ভাই বোনের মধ্যে জাইমুন ছোট। ২০১৮ সালে জাইমুনের বাবা মোবারক হোসেন মারা যান। তখন থেকে মা আনজু আরা খাতুন ও বোনকে নিয়েই জাইমুনের পরিবার। বাবা মারা যাবার পরে পরিবার ও পড়াশোনার সমর্থন দিয়েছেন জাইমুনের চাচাতো দাদা জনাব আবু তালেব সাহেব। 

জাইমুন ইসলাম বলেন, দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মত ভাষা আমার জানা নেই। নিঃস্বার্থভাবে একজন মানুষ এত কিছু করতে পারেন সেটা আমি উনার সংস্পর্শে না থাকলে জানতামই না। আমার এই কৃতিত্বের পেছনে আসল নায়ক হচ্ছেন আমার দাদা। উনার সমর্থন, অনুপ্রেরণা আজকে আমাকে এখানে দাঁড় করিয়েছে। নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি কারণ শুধু আমার দাদা নয় আমার চারপাশের সবাই আমাকে অনেক ভাবে সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল আহামরি যে ভালো হয়েছে তেমন নয়। জিপিএ-৫ পেলেও ইংরেজিতে পেয়েছিলাম এ মাইনাস। আমাকে নিয়ে সকলের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি তাই এই ফলাফলে কেউ খুশি হতে পারে নাই। সত্যি বলতে আমার জীবনের বিশেষ কিছু মানুষ আমার ফলাফলে কোনভাবে খুশি হতে পারেননি। তার ওপর রয়েছে আশেপাশের মানুষের নানান কথা। সবকিছু মিলিয়ে আমার মাঝে একটা বিষণ্নতা কাজ করতে শুরু করে। আর ফলাফলের পর থেকে প্রায় অনেকদিন আমার পড়ালেখাটা তেমনভাবে হয় নাই। সেজন্য আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাল পজিশনে চান্স পাই নি। কিন্তু শেষ সময়ে এসে আমার মাঝে একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করে। আমার জন্য আমার দাদা এত কিছু করতেছেন আমাকে এত সাপোর্ট দিতেছেন কিন্তু আমি ওনাকে খুশি করতে পারলাম না। তখন থেকেই আমি খুব ভালো ভাবে কৃষি গুচ্ছের জন্য নেওয়া শুরু করি।  

ভর্তি যুদ্ধের যাত্রা নিয়ে জাইমুন বলেন, আমার ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ার। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল খারাপ হওয়ার পর আমি ভাবলাম হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাগুলো আমি দিতে পারবো না। তাই পরবর্তীতে আর ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি নেয়া হয় নাই। কিন্তু আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করি কারণ আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আমি যদি সেই সময়টাই ভালো করে প্রিপারেশন নিতাম হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে পারতাম কিন্তু আজকের পুরো দেশে প্রথম স্থান অর্জন করার যে অর্জন সেটা হয়তো আমি কখনোই পেতাম না। আমি আমার বর্তমান অবস্থান নিয়ে অত্যন্ত খুশি। 

কৃষি গুচ্ছের পরীক্ষার ফলাফল সম্পর্কে জাইমুন বলেন, যদিও আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা তে চান্স পাই কিন্তু ফলাফল যতটা আশানুরূপ ছিল না। সত্যি বলতেই তেমন একটা খুশি হতে পারি নাই। আমার কৃষি গুচ্ছের প্রস্তুতি খুবই ভালো ছিল। আমি এটা জানতাম যদি আমি পরীক্ষা দিতে পারি পরীক্ষার আগে পর্যন্ত যদি কোন দূর্ঘটনা না হয় তবে ইনশাল্লাহ আমার ফলাফল ভালো হবে। কৃষি গুচ্ছ'র পরীক্ষা খুবই ভালো হয়। আমি ৯৯ টা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসি এর মাঝে ৯৭ টা প্রশ্নের উত্তর সঠিক হয়। নেগেটিভ মার্কিং সহ আমি মোট  ৯৬.৫০ পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করি। আমি ছোট বেলায় বড় একজন ব্যবসায়ী হতে চাইলেও বর্তমানে আমার ইচ্ছা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি নিয়ে পড়ার। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কৃষিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বাংলাদেশের কৃষি গবেষণায় অবদান রাখা, দেশের জন্য কিছু করা।

নিজ শিক্ষকদের নিয়ে জাইমুন বলেন, আমাকে গড়ে তোলা সকল শিক্ষকদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। আমার স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ কলেজের শিক্ষকবৃন্দ সকলেই অনেক আন্তরিক ছিলেন। বিশেষ করে কলেজ জীবনে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। কলেজের শিক্ষকরা ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। আর কলেজের ক্ষেত্রে আমি বলব আমাদের কলেজ অত্যন্ত সুগঠিত। কলেজের ক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই নয় আমাদের কলেজে শ্রেণী কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছু হয়ে থাকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। আর টিচারদের কাউন্সিলিং এর ব্যাপারটা বলতে গেলে সত্যিই অসাধারণ এবং অত্যন্ত উপকারী। তবে বিশেষভাবে বলতে হয় তুষার ভাইয়ের কথা। জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যখন আমি খারাপ আশানুরূপ ফলাফল করতে পারি নি তখনই পরিচয় হয় তুষার ভাইয়ের সাথে। তার দিক নির্দেশনা মোতাবেক প্রস্তুতি নেয়ায় কৃষিগুচ্ছে আমার এ অর্জন অনেকাংশেই সহজ হয়েছে। সকলেরই ভালো করার সামর্থ্য রয়েছে শুধু প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনার। অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফলাফল না করার পরেও কৃষি গুচ্ছে ভালো করেছি তুষার ভাইয়ের সঠিক দিক নির্দেশনা পাবার কারণে। সারাদেশে প্রথম হতে পেরেছি সঠিক নির্দেশনা পেয়েছি বলেই। আমি নির্দ্বিধায় বলবো আমার ভালো রেজাল্টের পেছনে কনস্ট্যান্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে আমার কলেজ ও কনস্ট্যান্টের শিক্ষকেরা আমার জীবনে অনেক বেশি আবদান রেখেছেন। আমি সকলের প্রতি সত্যিই অনেক কৃতজ্ঞ। 

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই কথা বলার থাকবে তুমি যে অবস্থাতেই আছো যেই পজিশনে থাকো না কেনো কখনো হাল ছেড়ে দিও না। পরিশ্রম করতে থাকো সফলতা অবশ্যই ধরা দিবে। আর সফলতার কোন শর্টকাট নাই। যদি তোমার কাছে সময় থাকে তাহলে শর্টকাট খুঁজতেও যেও না। তবে লক্ষ্য নির্ধারণ করো আর পরিশ্রম করে যাও। কখনো হতাশ হওয়া যাবে না হতাশা কখনোই তোমাকে জীবনে ভালো কিছু এনে দেবেনা। 

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.