এক শিক্ষাবর্ষে দু’টি বিভাগে কোটায় ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন শিক্ষার্থী। একটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া ২১ জনের মধ্যে ১০ জনই কোটার। সবমিলিয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১জন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি পরীক্ষায় কোটার এমন ছড়াছড়ি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি)। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ২ হাজার ১৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন ২২৪ জন শিক্ষার্থী। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হয়েছেন ১০১ জন। এর মধ্যে ৪৩ জন ছেলে ও ৫৮ জন মেয়ে। পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৫৩ জন। এর মধ্যে ৩০ জন ছেলে ও ২৩ জন মেয়ে।
শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবি ঘিরে বৈষম্যবরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়েছে। বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়েছেন সাঈদ-মুগ্ধরা। ঝরে গেছে আরো অনেক প্রাণ। এ সময়ে কোটার ক্ষেত্রে এ অবস্থা কাম্য হতে পারে না। অথচ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জোরালো আন্দোলন হয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, এ শিক্ষাবর্ষে নৃগোষ্ঠী কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৩০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২০ জন ছেলে এবং ১০ জন মেয়ে। উপাচার্য কোটায় ২০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১১ জন মেয়ে ও ৯ জন ছেলে। ভিন্নভাবে সক্ষম কোটায় ৭ জন করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া খেলোয়াড় কোটায় ৬ জন ছেলে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হন।
কলা ও মানবিকী অনুষদে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এ অনুষদে কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে ৪২ জন ছেলে ও ৪৩ জন মেয়ে। ইতিহাস ও দর্শন বিভাগে সর্বোচ্চ ১৭ জন করে শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছেন। সবচেয়ে কম চারুকলা এবং নাট্য ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে ৩ জন করে।
ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. এমরান জাহান বলেন, এক বিভাগে ১৭ জন শিক্ষার্থীকে কোটায় ভর্তি করা কোনোভাবেই ঠিক না। আমিসহ বিভাগের সবাই মিলে এর বারবার প্রতিবাদ করেছি। গত বছর আগের উপাচার্য থাকা অবস্থায়ও এর প্রতিবাদ করেছি আমরা।
তিনি বলেন, কোটায় যারা ভর্তি হয়, তুলনামূলকভাবে লেখাপড়ায় একটু দূর্বল হয় তারা। তাদেরকে আমাদের বিভাগে চাপিয়ে দেওয়া হয়। এরকম দর্শন বিভাগেও হচ্ছে। বর্তমানে নতুন প্রশাসন এসেছে। কিন্তু এবারও একই ঘটনা ঘটেছে। তবে আমি বিষয়টি ভর্তি কমিটির মিটিংয়ে বারবার উত্থাপন করেছি। উপাচার্যকে বলেছি, কোটায় ৫ জনের বেশি যেন আমার বিভাগে দেওয়া না হয়।
জীববিজ্ঞান অনুষদে বিভিন্ন কোটায় ৪৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ জন করে ছেলে ও মেয়ে। এর মধ্যে ২০ জন আছেন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়। এ অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেট্রিক্স বিভাগে ৯ জন করে কোটায় ভর্তি হয়েছে। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দুজন নারী শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন পোষ্য কোটায় অন্যজন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হন।
গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদে ৩২ জন শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ জন ছেলে ও ১৪ জনমেয়ে। এ অনুষদে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হন। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ১২ জন ছেলে ও ৮ জন মেয়েসহ ২০ জন শিক্ষার্থী কোটায় ভর্তি হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদে সবচেয়ে কম কোটায় ভর্তি হয়েছে। এ অনুষদে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ১৭ জন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে।
আইন অনুষদে ৪ জন কোটায় ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন নৃগোষ্ঠী কোটায়। এ ছাড়া ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি এবং তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে ১৮ জন কোটায় ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটেই ১০ জন।
ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ৬ ও ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে দু’জন রয়েছেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে মোট ২১ জন শিক্ষার্থী ভর্দি হয়েছেন। এর মধ্যে ১০ জনকেই বিভিন্ন কোটায় ভর্তি করানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করলেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন আসায় তারা ভর্তি কোটা সংস্কারের দাবিতে ফের সরব হয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর তারা এ দাবিতে মানববন্ধনও করেন।