সত্য, সততা ও নির্ভীকতা নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে নিঃস্বার্থ এক দায়িত্ব ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ল্যাব, ভাইবা, প্রেজেন্টেশন, ক্লাস টেস্ট, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতা করাটা চ্যালেঞ্জিং। সবকিছু ঠিক রেখে তথ্য সংগ্রহ, সংবাদ লেখা, লাইভ কভারেজ এর দায়িত্বটা যখন নেওয়া হয় মনে হয় এক সমুদ্র ব্যস্ততার মাঝে ডুবে রয়েছে যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সকল সদস্য।
ব্যস্ততা! তবে রমজান মাস আসলে ব্যস্ততা বেড়ে যেন এক পাহাড় সমান জমে যায় পাশাপাশি বদলে যায় দৈনন্দিন কাজের তালিকা। রমজান মাস আসলে যবিপ্রবির ক্যাম্পাসটা একটু বেশি ব্যস্ত হয়ে যায়। ১ম রমজান থেকে শুরু করে একটানা ১৮ রমজান ক্লাস, পরীক্ষা, ল্যাব, ভাইবা, প্রেজেন্টেশন, টিউশনি, মাঝেমধ্যে ইফতার মাহফিল এর আয়োজন সহ সংবাদ সংগ্রহ, রিপোর্ট লেখা, লাইভ কভারেজ সবকিছুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে করতে সকালটা পেরিয়ে কখন যে বিকেল হয়ে যায় বোঝাটা বোধগম্য নয়। ক্লান্ত শরীরে ইফতারের পূর্ব মূহুর্তে শুরু হয় অস্থিরতা, কখন ইফতার করব, কোথায় ইফতার করব। এতো অস্থিরতার মাঝেও সবকিছুই যেন খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নেওয়া হয়ে যায়। এটা সত্যি যে সৃষ্টিকর্তার দেওয়া বড় নেয়ামত দক্ষতা ও ধৈর্যের। নেই পরিবারের স্পর্শ, নেই রক্তের মানুষগুলোর সাহায্য-সহযোগিতা , রয়েছে শুধু সত্য, সততা ও নির্ভীকতা। যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিটা সদস্য যেন একজন শিক্ষার্থী, একজন সাংবাদিক এবং একজন দক্ষ ও নির্ভীক নাগরিক।
অবশেষে এলো উনিশে রমজান মনের মধ্যে শুরু হল বাড়িতে যাওয়ার অস্থিরতা। তবুও যেন মনের কোণে এক ভয় ক্যাম্পাস নিয়ে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে খবরটা কিভাবে পৌঁছাবে।প্রশাসনিক কার্যক্রম তো কার্য সমিতির সকল সদস্যই বাসার পথে তবুও যেন পিছুটান ছাড়েই না। এভাবেই ছোট্ট একটা পিছুটান নিয়েই বাড়ির পথে যবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সকল সদস্য। এইতো প্রায় শেষ হলো ব্যস্ততম রমজান মাস।
যবিপ্রবির ক্যাম্পাস সাংবাদিক তানবীর খন্দকার তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রমজান মানে সংযম, কিন্তু একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকের জন্য এটি শুধু আত্মশুদ্ধির মাস নয় এটি ছিল ব্যস্ততার নতুন চ্যালেঞ্জ। ক্লাস, টিউশন, সংবাদ সংগ্রহ আর লেখার চাপের মধ্যে কেটেছে পুরো মাস। রমজানে সাংবাদিকতার কাজ কমে যায় না, বরং কখনো কখনো বেড়ে যায়। কোনো মানববন্ধন, আন্দোলন বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার খবর পেলেই ছুটে যেতাম। সেগুলো কভার করার পর ক্লান্ত শরীরে নিউজ লিখতে বসতাম, যেন সঠিক সময়ে তা পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায়। প্রতিদিন ক্যাম্পাস থেকে শহরে গিয়ে টিউশন করানো ছিল রুটিনের অংশ।রোজার মধ্যে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া সহজ ছিল না, কিন্তু ছাত্রদের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাকে প্রতিদিন সেখানে যেতে বাধ্য করেছে। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে কয়েকজন সাংবাদিক একসাথে ইফতার করা ছিল একধরনের মানসিক প্রশান্তি। এই পুরো সময়ে আমি বুঝেছি, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মূল শক্তি হলো ধৈর্য ও প্রতিজ্ঞা। রমজান আমাকে শুধু আত্মসংযম নয়, সময় ব্যবস্থাপনা ও দায়িত্ববোধের নতুন এক মাত্রা শিখিয়েছে।
যবিপ্রবির আরেকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক ইমদাদুল বলেন, রমজান মাস সাংবাদিকতা, সিয়াম সাধনা, ইবাদতবন্দেগী ও পেশাদারিত্বের এক অনন্য সাধনার মাস। রমজান শুধুমাত্র সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম ও দায়িত্বশীলতার এক অপূর্ব সমন্বয়। বিশেষ করে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের জন্য এই মাস মানে দ্বিগুণ ব্যস্ততা, যেখানে ইবাদতের পাশাপাশি সংবাদ সংগ্রহ ও উপস্থাপনের দায়িত্বও থাকে সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ক্লাস, রিপোর্টিং এবং সংবাদের পেছনে ছুটতে হয়, সঙ্গে ক্যাম্পাসের ইফতার মাহফিলসহ নানা আয়োজনের খবর সংগ্রহেও থাকতে হয় তৎপর। অনাহারে ও তৃষ্ণার্ত থেকেও সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে কোনো শৈথিল্য দেখানোর সুযোগ নেই। বরং এই চ্যালেঞ্জ আমাদের আরও ধৈর্যশীল, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল করে তোলে। রমজান আমাদের শেখায়, সংযম কেবল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণে নয়, বরং সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা, সততা ও অধ্যবসায়ের মধ্যেও প্রয়োজন। এই মাস সাংবাদিকতার প্রতি আরও গভীর টান সৃষ্টি করে এবং আমাদের দায়িত্ববোধকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। সত্যিকার অর্থে, রমজান আত্মশুদ্ধি ও পেশাদারিত্বের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।