আবদুল্লাহ আল তৌহিদ,নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদযাপিত হয়েছে।
সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, নোবিপ্রবি শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা, গার্ড অব অনার প্রদান, আলোচনা সভা এবং লুমিনারীর আয়োজনে চিত্র প্রদর্শনী হয়।
আয়োজনের শুরুতে নোবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল । পরে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষীণ করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, ইনস্টিটিউট, বিভাগ, হল, কর্মচারীবৃন্দ, নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস অডিটোরিয়ামে বিজয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ ইসমাইল।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক জনাব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবদায়িত্ব পাওয়া কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হানিফ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর,হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, শিক্ষকবৃন্দ, কর্মকর্তা- কর্মচারী এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন এবং শহিদদের আত্নত্যাগের উপর আলোচনা করেন।
নোবিপ্রবির নবনিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ হানিফ বলেন- আমি প্রথমে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় বীরদের যারা এদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।এবং একই সাথে স্মরণ করছি ২৪ এর ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহিদদের। ৭১ এ যে কারণে আমরা স্বাধীন হয়েছি সেই চেতনাধারণ করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।এবং আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা,মাননীয় রাষ্ট্রপতি সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমাকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ- উপাচার্য অধ্যাপর ড. মোহাম্মদ রেজোয়ানুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় আমাদের সবার, কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির নয়। ইদানীং একটি বয়ান তৈরি করা হচ্ছে যেখানে ৭১-এর বিজয়কে ২৪-এর বিজয়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করানো হচ্ছে যা জনগণ কখনো গ্রহন করবে না, আমরা কখনো মেনে নিব না। আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের অনেক ঘাটতি রয়েছে, আমরা পোশাকি দেশপ্রেম থেকে সরে এসে প্রকৃত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হব। যার উপর যে দায়িত্ব অর্পিত আছে তার সর্বোত্তমভাবে পালন করাটা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, শুরুতেই স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন যাদের আত্মত্যাগে আমরা বিজয় লাভ করেছি একই সাথে স্মরণ করছি ২৪ এর গণ বিপ্লবে প্রায় ১৬০০ এর মত ছাত্র জনতা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন। বিজয় দিবস আমাদের সকলের, এদেশের আপামর জনতার। খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের মানুষদের, এই বিজয় কোন দলের বা কোন গোষ্ঠীর নয়। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও দেশকে দ্বিখন্ডিত করে রাখা হয়েছে দেশের উন্নয়নে, অবদানে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ নিজেদেরকে সব সময় সোল এজেন্ট হিসেবে দাবি করেছে। স্বাধীনতার এই সুবর্ণ বছরে আমরা দেশে আর কোনো বিভাজন চাইনা। আসুন আমরা এই বিজয় দিবসে প্রত্যয় করি শোষণমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত ও ন্যায়যুক্ত সমাজ চাই যেখানে সত্য-মিথ্যার প্রভেদ থাকবে, ন্যায়-অন্যায়ের প্রভেদ থাকবে, যেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবে ন্যায়ের পথে চলতে পারবে সেই সমাজকেই আসুন আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি। আমরা কোন ভেদাভেদ চাই না মুক্তিযুদ্ধে যাদের যে অবদান ছিল সবাইকে যথাযথভাবে সম্মান দিয়ে এ দেশকে নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।