বুলেটে গেলো চোখের আলো, আয় বন্ধে আশার প্রদীপও নিভবে সাব্বিরের!


রাজধানীর মগবাজারের গ্রীনওয়েতে বসবাস সাব্বির আহমেদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য ছিলেন তিনি। বাবা হাফিজ আহমেদ ইমামতি করতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সাব্বির ছিলেন সবার বড়। অন্য দুই ভাইও পড়াশোনা করছেন। তাঁর ওপর ছিল তাদের পড়ালেখার সব দায়িত্ব। পরিবারের দায়িত্বের সঙ্গে তাঁর মধ্যে যে গভীর দেশপ্রেম আছে, তার ছাপ রেখেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে। 

২০২৪ সালের জুলাই মাসে যখন ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন, তখন সাব্বিরও বসে থাকেননি। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আর মুক্তির স্বপ্ন তাকে তাড়িত করেছিল। প্রতিদিনই আন্দোলনের মিছিলে তার উপস্থিতি ছিল অনুপ্রেরণার। মুক্তির আশায় ও দেশের ভবিষ্যতের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে তিনি প্রতিদিন আন্দোলনে যোগ দিতেন। 

৪ আগস্ট সবার মতো সাব্বিরও তাঁর কর্মস্থল থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন। তখনও তিনি জানতেন না, তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসবে। সেদিন তিনি আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশপ্রেমের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছিলেন। তার চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে স্বৈরাচারের বুলেট। তবুও তার জীবনে রয়েছে হার না মানা গল্প—এটি কেবল একটি কষ্টের কাহিনী নয়, এক সাহসী আত্মত্যাগের মহাকাব্য। সাব্বির এবং তাঁর পরিবার-প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় সে তথ্য। 

প্রথমে ডান চোখে গুলি লাগলে চোখ বেরিয়ে আসে। এরপর বাম চোখে আঘাত পান। মুহূর্তে তার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়, অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ। সাব্বির শুধু তার চোখ হারাননি, হারিয়ে গেছে তার চাকরি, পড়াশোনা। আর্থিক সংকটও তীব্র হয়েছে।

সাব্বির ও তার সহযোদ্ধা জানান, কারওয়ান বাজারে আন্দোলনকারীদের সাথে মিছিলে ছিলেন। কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলেও হঠাৎ পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের আক্রমণ শুরু হয়। বিকেল ৫টার দিকে যখন তিনি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক তখন পুলিশের গুলি লাগে চোখে।

প্রথমে ডান চোখে গুলি লাগলে চোখ বেরিয়ে আসে। এরপর বাম চোখে আঘাত পান। মুহূর্তে তার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায়, অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তার পরিবারের ভবিষ্যৎ। সাব্বির শুধু তার চোখ হারাননি, হারিয়ে গেছে তার চাকরি, পড়াশোনা। আর্থিক সংকটও তীব্র হয়েছে। সবকিছুর পরেও তার মনোবল অটুট। তিনি বলেন, ‘আমার চোখ গেছে, কিন্তু আমি চাই, আমার দেশের জন্য আমি যা করেছি, তার মূল্য যেন আমাকে দেওয়া হয়। দেশ যেন ভালোভাবে চলে।’

জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কিছু অনুদান সাব্বিরকে দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ইকো’র সহযোগিতায় ইমপ্যাক্ট ইনিশিয়েটিভের সিইও তাঁর হাতে একটি অটোরিকশা হস্তান্তর করেন। কিন্তু এটি তার চিকিৎসা ও পরিবার নিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট নয়। 

সাব্বির জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি। বর্তমানে তিনি হতাশ, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। নিজের পরিবারের জন্য আগের মতো স্বাভাবিক সবকিছু করতে পারেন না বলেও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। 

আরো পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা তিন ক্যাটাগরিতে, রয়েছে অসন্তোষও

সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাহলে আমি পুনরায় নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারব। আমার পরিবারও আবার সুখে দিনানিপাত করবে।’

সাব্বিরের জীবন থেকে অবলম্বন চলে গেলেও দেশের প্রতি ভালোবাসা অবিচল। হৃদয়ে আজও দেশের জন্য ত্যাগের একটি গভীর বোধ আছে। তিনি বলেন, ‘এমন অনেকেই আছেন যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। আমাদের উচিত তাদের সেই ত্যাগের মূল্যায়ন করা। আমার মতো যাদের ক্ষতি হয়েছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’ 

তার ভাষ্য, ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও আমরা যে কাঙ্খিত লক্ষ্য নিয়ে দেশ সংস্কারের উদ্দেশ্যে রাস্তায় নেমেছিলাম, তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। দেশ সংস্কার হলেই কেবল দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবে।’

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.