ইবির আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের গোপন মিটিং পণ্ড করল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন


সংগীত কুমার, ইবি প্রতিনিধিঃ 
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের গোপন মিটিং পণ্ড করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও উপ-রেজিস্ট্রার টিপু সুলতানের কক্ষে ঘটনাটি ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি তুলে ধরে এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সজাগ হওয়ার অনুরোধ জানান। 

উপাচার্য কার্যালয়ে এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিন্নাতুল করিম, সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলামসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি— দলীয় কর্মকর্তা নয়, যোগ্য ও সৎ শিক্ষককে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ ক্ষুব্ধ এবং প্রশাসন ভবন অচল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন বলে দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শিক্ষার্থীদের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নেতাবৃন্দ প্রশাসন ভবনের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতানের কক্ষে পরিদর্শনে গিয়ে মিটিংয়ের প্রমাণ পান এবং পরে উপস্থিত নেতাকর্মীরা সেই মিটিং পণ্ড করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে জানতে পারি— বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে কর্মকর্তা সমিতির সভাপতির অফিস কক্ষে গোপন মিটিং চলছিল। আমরা গিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছি— পরে শিক্ষার্থীরা মিটিং বন্ধ করে দেয় এবং পরবর্তীতে যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি প্রশাসন ভবনের বিভিন্ন দপ্তরে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হয়— অন্যান্য দপ্তরগুলোতে সেই বিষয়ে একটু খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম। পরে উপাচার্যের কাছে আমরা এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেছি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, “আমরা কোন গোপন মিটিং করছিলাম না, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার কোন পরিকল্পনা আমাদের নেই। সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৃতীয় তলায় বসেন, তিনি একটু আমার কক্ষে সাক্ষাৎ করার জন্য এসেছিলেন। আমরা কোন গোপন মিটিং করিনি।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “শিক্ষার্থীরা যদি কোনো ভোগান্তির শিকার হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা অফিস প্রধানদের সাথে বসে বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। গোপন মিটিং করে কর্মকর্তারা যদি নিজ কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন— তাহলে আমরা কর্মকর্তাদের শোকজ করবো। নিয়ম না মানলে বিচার হবে—কোনো ধরনের মানবিক বিবেচনার সুযোগ নেই।”

প্রসঙ্গত, এসময় উপাচার্য কার্যালয়ে প্রশাসনের ভবনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও গোপন মিটিংয়ের বিষয়গুলোর বাহিরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। 

দাবিসমূহ হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় আইডি কার্ডের দ্রুত বাস্তবায়ন, রোজায় মুসলিম ব্যাতীত অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছেলে ও মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট এক হলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা, হলগুলোর সমন্বয়ে ইফতারের আয়োজন, বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা, অফিসকালীন সময়ে কোনো কর্মকর্তার রাজনৈতিক মিটিং বন্ধ, কর্মকর্তাদের শিক্ষার্থীদের সেবায় নিয়োজিত রাখার দাবি জানান। এছাড়া উপাচার্যের কাছে প্রশাসনের আদেশ না মানলে কর্মকর্তাদের শোকজ করার এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান সুইট।

নবীনতর পূর্বতন