ইবিতে নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনা, উপাচার্য কার্যালয়ে তুমুল হট্টগোল


ইবি প্রতিনিধি
: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসনের বিভিন্ন পদে আওয়ামী দোসরদের অপসারণ ও সৎ-মেধাবীদের নিয়োগের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে উপাচার্য কার্যালয়। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শিক্ষক-প্রশাসনের মধ্যে তুমুল হট্টগোলের ঘটনা ঘটে। এ সময় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের মধ্যেও তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রেজিস্ট্রার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরসহ বিভিন্ন পদ থেকে আওয়ামী সুবিধাবাদীদের অপসারণ এবং সৎ-মেধাবী ব্যক্তিদের নিয়োগের দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিল ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মতবিনিময়েও একই দাবি উত্থাপন করা হয়। 

মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. নওয়াব আলীর সঙ্গে প্রশাসনের এক মিটিং চলাকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসি কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে তার অপসারণের দাবিতে হট্টগোল শুরু করেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় ড. নওয়াব আলীকে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এরপর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ভিসি অফিসে প্রবেশ করেন। এ সময় ভিসি অফিসে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল বারীসহ অন্যান্যরা। ছাত্রদলের নেতারা ভিসির কার্যালয়ে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের বেরিয়ে যেতে বলেন। 

পরবর্তীতে উপাচার্যের কার্যালয় থেকে চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আবারও উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর এবং ছাত্রনেতাদের মধ্যে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। সাংবাদিকদের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি যখন আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন, তখন বাইরের কেউ কেন এখানে থাকবে? গতকাল আপনাকে বলেছিলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাড়া কারো সঙ্গে আপনি আলোচনা করবেন না। তাহলে আজকে এই রুমের আওয়াজ আমতলা থেকে শোনা যাচ্ছে কেন?”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা হট্টগোল করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, আমি তাদের গলা টিপে হত্যা করব। প্রশাসন ভবনে যে কর্মকর্তারা চেঁচামেচি করছে, আমরা তাদের অবস্থান জানি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা এককভাবে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করেছি। আমরা প্রশাসনের সবাইকে সহযোগিতা করে আসছি। কেউ যদি আমাদের এই সহযোগিতাকে ছিন্ন করতে চায়, আমরা তার গলা নলি টেনে ছিঁড়ে ফেলব। আমরা ৪৮ ঘন্টা সময় দিচ্ছি, যারা হট্টগোল করেছে তাদের বিচার করতে হবে।”

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, “প্রক্টর শাহিনুজ্জামানের সঙ্গে আমার কী হয়েছে, তা আমি মনে রাখিনি। কিন্তু একজন সহকারী প্রক্টর ড. আব্দুল বারীসহ অন্যরা আমাদের দিকে দেড়ে আসে। একজন সহকারী প্রক্টর কিভাবে এবং কেন আমার দিকে তেড়ে আসবে? আত্মরক্ষার্থে আমি তাকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেই।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি সমস্যা আমি সমাধান করছি। চিৎকার-চেঁচামেচি হলে আমি ঠেকাচ্ছি। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কিছু দিতে এসেছি, এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়ার বা নেওয়ার মতো আমার কিছু নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয় বিভাজন করে আমার কোনো ফায়দা নেই। যারা এখানে হট্টগোল করেছে, তাদের একটা উপলব্ধি থাকা উচিত— আমি কখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলিনি। আমি উপ-উপাচার্যকে প্রশাসনের নিজেদের পরিপূরক মনে করি। কারও সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হবে, আমি কখনো ভাবিনি।”

তিনি আরও বলেন, “আমি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। দপ্তরগুলোর প্রধানদের অপসারণের কাজ তো আমার চলমান, আমার একটু সময় লাগবে— সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে অপসারণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করাবে কে? গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর জন্য এখনো যথাযথ বিকল্প তৈরি হয়নি। আজকের ঘটনা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত।”

নবীনতর পূর্বতন