কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) প্রতিষ্ঠার ১৮ বছরেও পরিবহন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। প্রতি ৮ শিক্ষার্থীর জন্য বাসের একটি আসন আর ৩৭১ শিক্ষার্থীর জন্য বরাদ্দ একটি বাস।
প্রতিদিনই আসনের চেয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী নিয়ে বাস চলাচল করে। ফলে শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে ও দরজার সামনে ঝুলে যাতায়াত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর ও পরিবহন পুলের তথ্য মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা বর্তমানে ৫ হাজার ৯৩৪ জন। তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ থাকা নিজস্ব বাস আটটি ও বিআরটিসির ভাড়ায় চালিত বাস আটটিসহ মোট ১৬টি বাসে সিট সংখ্যা ৭৫০।
মোট শিক্ষার্থী ও বাস সংখ্যার হিসেব অনুযায়ী, ৩৭১ শিক্ষার্থীর জন্য একটি বাস ও প্রতি আট শিক্ষার্থীর জন্য একটি সিট বরাদ্দ রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শিডিউলে বিআরটিসির ভাড়ায় চালিত লাল বাসগুলোর বেশিরভাগেরই ফিটনেস নেই। প্রায়ই যাত্রার মাঝপথে নষ্ট হয়ে যায় এই বাসগুলো। ফলে শিক্ষার্থীদের ধাক্কাতে হয়। এছাড়া এই বাসগুলোর পাখা নষ্ট, বৃষ্টির দিনে ছাদ দিয়ে পানি পড়াসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের সংকট থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বাধ্য হয়ে মেস কিংবা বাসা-বাড়িতে থাকতে হয়। এদিকে বাস সংকটের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া কিংবা শহরে টিউশন; বাসে জায়গা না পাওয়ায় অনেককেই অটোরিকশা কিংবা সিএনজির উপর নির্ভর করতে হয়। সেখানে বাড়তি ভাড়ার পাশাপাশি সড়কে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একবার বাসে ঝুলে ঝুলে ক্যাম্পাসে আসে আবার ক্লাস শেষ করে বাসে ঝুলে ঝুলে বাসায় যায়। যেখানে একটা বাসে সিট সংখ্যা ৫০/৬০টি সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী আসা যাওয়া করেন। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। মাঝপথে বাস নষ্ট হওয়া দৈনন্দিন বিষয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।’
মার্কেটিং বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই বাসের সংকট দেখতেছি৷ প্রতিদিনই বাসের সিট নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়তে হয়। গাদাগাদি করে বাসে যাওয়া-আসা করা লাগে। দ্রুত সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছি।’
একই বর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘কুবি শিক্ষার্থীদের বাস সংকট যেন এখন সকল ভোগান্তির কারণ হয়েছে। প্রশাসন তাদের মন মতো সব করছে, অথচ শিক্ষার্থীদের সমস্যা তারা কর্ণপাত করছে না। বাসে আসা-যাওয়ার সময় দাঁড়ানোর জায়গাটা পর্যন্ত থাকে না। বারংবার বাস সংকট সম্পর্কে প্রশাসন ও ভিসি স্যার বরাবর জানানোর পরও তারা বিষয়টা অবহেলা করছেন। অতিদ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে কাজ না করতে পারলে, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না করতে পারলে এই প্রশাসন ব্যর্থ বলে গণ্য করা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের চিন্তায় আছে। যেহেতু শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি আর বাস সংখ্যা অনেক কম, এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। প্রশাসনের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করব। যদি সম্ভব হয়, বাজেটে বরাদ্দ থাকে, তাহলে নতুন গাড়ি কেনা হবে। বাসের ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে আমরা সুপারিশ করব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘আমরা পর্যায়ক্রমে লাল বাসের সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছি। সরকারের নির্দেশনাও রয়েছে নিজস্ব বাসের পরিবর্তে ভাড়ায় চালিত বাসের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। আমরা নীল বাস (নিজস্ব বাস) বাড়ানোর চেয়ে ভালো লাল বাসের ব্যবস্থা করতে পারি। এছাড়া নীল বাসের চেয়ে লাল বাসের প্রতি সরকার থেকে বরাদ্দও বেশি।’