আব্দুর রহিম, নোসক প্রতিনিধি: নোয়াখালী সরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) বিবিএস কোর্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন রাব্বিকে করা হয় ভূলুয়া ডিগ্রি কলেজে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নোয়াখালীর সদর উপজেলার নেওয়াজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের ২০ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি (পাস) কোর্সের ছাত্র মো. ইলিয়াছ সুজনকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় নোয়াখালী সরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) বিবিএস কোর্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন রাব্বিকে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর দলীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদ্য গঠিত কমিটির দায়িত্ব পাওয়া মুরাদ হোসেন রাব্বি ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২০-২১ সেশনের স্নাতকে (বিবিএস) নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজের ডিগ্রি (পাস) বিবিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। কমিটি ঘোষণার পর ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজের কয়েকজন শিক্ষক মুরাদ হোসেন রাব্বিকে কলেজে নিয়ে অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
এদিকে নোয়াখালী সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মুরাদ হোসেন রাব্বির বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের ফেসবুক পেজে দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতির পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম সই করা এ সংক্রান্ত নোটিশ প্রকাশ করা হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩/০৩/২০২৫ ইং নোয়াখালী জেলা শাখার অধীনস্থ ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি প্রকাশ করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন রাব্বির বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির আজ এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইলিয়াছ সুজন বলেন, ‘মুরাদ হোসেন রাব্বি আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক। সে এই কলেজের শিক্ষার্থী বলে আমি শুনেছি।’ তাকে কলেজে ক্লাস করতে বা আসতে দেখেছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন রাব্বি বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে কমিটি দেয়া হয়েছে।’ কোন কলেজের শিক্ষার্থী বা কীভাবে পদ পেয়েছেন, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েক মাসে আগে বিলুপ্ত হওয়া নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজগর উদ্দিন দুখু বলেন, এক কলেজের ছাত্র অন্য কলেজের পদ পাওয়া অনৈতিক কাজ। আমাদের দলের অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনা হলো নিয়মিত ছাত্র দিয়ে এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নোয়াখালীর ৩৬ টা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি ঘোষণা করা হলেও কোথাও কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তাছাড়া নোয়াখালী জেলা, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির তার নিজের জন্মস্থান, এখানে ভোটের মাধ্যমে গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি হলে, পুরো দেশের কাছে মাইলফলক হতো। এরকম যাচাই-বাছাই না করে, আরেকটু সচেতন হলে সরকারি মুজিব কলেজ, কবির হাট সরকারি কলেজ, ভুলুয়া ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদল নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতো না। বিগত কমিটিতে ছিল, নিয়মিত ছাত্র, আন্দোলন সংগ্রামের ত্যাগী ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের কর্মীবান্ধব অসংখ্য ছাত্রনেতারা এসব কমিটিতে জায়গা পায়নি। আমরা অনেক দিন ধরে নোয়াখালীতে দায়িত্ব পালন করেছি অথচ কমিটি গঠনের সময়ে আমাদের থেকে কোন পরামর্শ নেওয়া হয়নি। মুলত এসব কারনেই কমিটিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়নি বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে মুরাদ হোসেন রাব্বির বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে পদ পাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে খোঁজ খবর নেই। তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।