জুলাই বিপ্লব স্মরণে ঢাবিতে আন্তর্জাতিক আলোচনা, উঠে এল বর্তমান সঙ্কটের চিত্র

জুলাই বিপ্লব স্মরণে ঢাবিতে আন্তর্জাতিক আলোচনা, উঠে এল বর্তমান সঙ্কটের চিত্র

বর্তমান বাংলাদেশ সঙ্কট উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, বলে মন্তব্য করেছেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ সঙ্কট উত্তরণের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনই ন্যায়বিচারের গ্যারান্টি নয়। এক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের বিচারব্যবস্থাকে ভয়মুক্ত করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কারসহ ছাত্র আন্দোলনকে যেকোনো দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করতে হবে।

রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত প্রথম জুলাই বিপ্লব আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

আদিলুর রহমান বলেন, আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। এই শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করেছিল। শুধু তাই নয়, র‍্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে 'অপরাধী' হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাঁধা দেওয়া হতো।

আদিলুর রহমান তার বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণীকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ যারা বিপদজনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।

বক্তব্যের শেষে তিনি এই সম্মেলনকে একটি 'জাতীয় অঙ্গীকারে' পরিণত করতে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও, ফটো নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলার, স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই ইতিহাস সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, একাডেমিক ও গবেষণাপত্র উপস্থাপন ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনা এবং বাংলাদেশ ২.০' গঠনের দিকনির্দেশনা তৈরি- এ লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে দেশ ও বিদেশের মোট ১৫টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি সংগঠন।

এর আগে জুলাই বিপ্লবে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান বক্তব্য প্রদান করেন। এসময় তারা সকল শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শহীদদের সনদ চান।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মেলনটির আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, '২৪-এর জুলাই বিপ্লব কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের যুবসমাজের একত্রিত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অংশে 'ইন্ডিয়ান হেজিমনি এন্ড জুলাই রেভুলিউশন ২০২৪' শিরোনামে কী-নোট বক্তব্য প্রদান করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

এসময় তিনি বলেন, ভারত নিজে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হয়েও বাংলাদেশে একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে সমর্থন করে। কারণ তারা মনে করেছিল যে শেখ হাসিনার মাধ্যমেই তাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটে ভারতের সমর্থনই এই প্রমাণ করে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে ধর্মনিরপেক্ষ, ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী আদর্শের এক অনন্য সংমিশ্রণ যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। এই বিপ্লব শুধু আমাদের দেশেই নয় বরং সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি শিক্ষণীয় ঘটনা।

আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ বলেন, জুলাই বিপ্লব কোনো বিদেশী শক্তি বা গভীর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ফল নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সংগ্রামের ফসল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীদের কাছে প্রমাণ দেওয়া কঠিন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ এতে জড়িত ছিল না। আজ পর্যন্ত আমি এমন কোনো প্রমাণ দেখিনি। যদি এমন কোনো প্রমাণ কারো কাছে থাকে আমি সেটা দেখাতে চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি আরো বলেন, বিপ্লব সফল হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অস্থিতিশীলতা পরিবেশ ও তথ্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে যা এখনও চলমান রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় আমেরিকার প্রশাসন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে তা উল্লেখ করে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে সরকারের যারা দায়িত্বে আসবেন তাদেরকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে উল্লেখ করে জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ২৪-এর জুলাই বিপ্লব কেবল একটি প্রতিবাদ ছিল না, এটি ছিল জাতীয় জাগরণ। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৪০০টি প্রবন্ধ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৬০টি প্রবন্ধ মৌখিক উপস্থাপনের জন্য এবং ৬০টি পোস্টারকে মনোনীত করা হয়। পরে সম্মেলন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে 'লাল জুলাই' নামক একটি মঞ্চ নাটক উপস্থাপন করা হয়।

হাসিনা গেলেও ফ্যাসিবাদী কাঠামো রয়ে গেছে: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার
'আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সরাতে পেরেছি, কিন্তু ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনো রয়ে গেছে। এই কাঠামোর বিরুদ্ধে লড়াই সবার এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।'রবিবার (২৭ জুলাই) সকাল ১১টায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত 'জুলাই স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠানে' প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, 'সামনের দিনগুলো হয়তো আরও কঠিন হতে পারে। আমরা একসঙ্গে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ব।' জুলাই আন্দোলনে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের প্রশংসা করে তিনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে গবি শিক্ষার্থীদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতা শুনে আপ্লুত হয়েছি। পুলিশ যেভাবে গুলি চালিয়েছে, লাঠিপেটা করেছে—তা সহ্য করা কঠিন। শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা শুনে বলা যায় এই আন্দোলন কেবল তাৎক্ষণিক কোনো ক্ষোভ নয়, বরং এটা একটি চিন্তাশীল, আদর্শনির্ভর প্রতিবাদ। রাজপথে শিক্ষার্থীদের অকুতোভয় সংগ্রাম প্রমাণ করে তাদের শিক্ষা, চেতনা ও সাহসে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আদর্শের প্রতিফলন ঘটেছে।'অনুষ্ঠানে ফার্মেসী বিভাগের প্রভাষক তানিয়া আহমেদের সঞ্চালনায় কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তাদের সংকট ও লড়াইয়ের স্মৃতিচারণ করেন। জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আহত হওয়া ৯ জন শিক্ষার্থীকে সম্মাননা ও উত্তরীয় প্রদান করেন উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন জুলাই আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে বলেন, 'দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করার সময় তাদের পাশে সর্বপ্রথম দাঁড়ায় আমাদের শিক্ষার্থীরা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গবি শিক্ষার্থীরা সর্বদাই সোচ্চার। ভবিষ্যতেও তাদের এ লড়াই জারি থাকবে বলে আশাকরি।'শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানের প্রবেশদ্বার সংলগ্ন শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে জানানো হবে।অনুষ্ঠানের সভাপতি কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে শহীদদের জীবনের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি, ফিরে পেয়েছি বাকস্বাধীনতা। মুগ্ধ, আবু সাঈদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। সুন্দর দেশ গড়তে সকলের ভূমিকা রাখতে হবে।'পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই আন্দোলনের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসআর

১০ আগস্টের মধ্যে এসএসসির খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে প্রকাশ হবে। এদিন শিক্ষার্থীরা ওয়েবসাইট থেকে ফল দেখার পাশাপাশি এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানতে পারবে।আজ রবিবার (২৭ জুলাই) মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেছেন, ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যেই পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই অনুযায়ী ৯ আগস্টের মধ্যে ফল প্রকাশের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। সে অনুযায়ী আমরা ১০ আগস্ট ফল প্রকাশের জন্য চিন্তাভাবনা করেছি। ফল পরিবর্তন হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হবে এবং সংশোধিত ফলাফল বোর্ডের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে।এর আগে, ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ের জন্য ১৫০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবারে বোর্ডটিতে রেকর্ডসংখ্যক ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী মিলে মোট ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি খাতার পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে। গত বছরের তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার বেশি, আর খাতা চ্যালেঞ্জের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার।বোর্ড সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি পুনঃমূল্যায়নের আবেদন পড়েছে গণিত বিষয়ে-সংখ্যা ৪২ হাজার ৯৩৬টি। এরপর রয়েছে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (প্রত্যেকটিতে ১৯ হাজার ৬৮৮টি করে), পদার্থবিজ্ঞান (১৬ হাজার ২৩৩টি) এবং বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র (১৩ হাজার ৫৫৮টি)। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে চারু ও কারুকলায়, মাত্র ৬টি।তবে, পুনঃনিরীক্ষণের অর্থ নতুন করে খাতা মূল্যায়ন নয়। বরং উত্তরপত্রে নম্বর যোগে ভুল, প্রশ্ন বাদ পড়া, ওএমআর শিটে নম্বর উঠেছে কি না বা ভুলভাবে বৃত্ত ভরাট হয়েছে কি না-এসব দিক যাচাই করা হয়। সেসব ক্ষেত্রেই নম্বর সংশোধন করে নতুন ফল প্রকাশ করা হয়।এদিকে, শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলে মোট ৬ লাখ ৬৬০ জন শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭১৬ জন এবং ছাত্রী ২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৪৪ জন।এসকে/এইচএ

ঢাবির হলে ধূমপায়ীদের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ.এফ. রহমান হলে অধূমপায়ী শিক্ষার্থীদের কক্ষে ধূমপায়ীদের সিট দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ।শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে হলের ফেসবুক গ্রুপে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ বিষয়টি জানান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কাজী মাহফুজুল হক সুপণ। এ সময় তিনি আরও জানান, ধূমপানমুক্ত কক্ষের বাইরে স্টিকার লাগানো থাকবে।ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘তোমরা যদি নিজেদের কক্ষটিকে ধূমপানমুক্ত কক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করতে চাও, তাহলে কমেন্টে রুম নম্বরটি লিখে দাও। রুমমেটদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নাও। তোমাদের কক্ষের বাইরে ধূমপানমুক্ত কক্ষ হিসেবে স্টিকার থাকবে এবং ভবিষ্যতে তোমাদের কক্ষে কোনো ধূমপায়ী ছাত্রকে সিট দেওয়া হবে না।’হল প্রাধ্যক্ষের এ স্ট্যাটাসের পর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে হলের শিক্ষার্থী মো. জহিরুল হক তমাল বলেন, ‘হল প্রাধ্যক্ষের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। একজন অধূমপায়ী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এটি শুধু আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, হলে একটি সচেতন ও সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলার দিকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একজনের অভ্যাস যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়—এই নীতিতেই এমন উদ্যোগ অন্যান্য হলে গ্রহণ করা উচিত।’হলের আরেক শিক্ষার্থী মোবাশ্বির আলম বলেন, ‘হলের কক্ষে ধূমপান একটি গুরুতর সমস্যা, যা একই কক্ষে থাকা অধূমপায়ী শিক্ষার্থীদের জন্য চরম অসুবিধার কারণ হতে পারে। কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, রুমের সামগ্রিক পরিবেশ এবং বসবাসযোগ্যতা রক্ষার স্বার্থেও ধূমপানের বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। যদিও প্রতিটি ছাত্রের ব্যক্তিগত অভ্যাসের ওপর প্রশাসনের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকা সমীচীন নয়, তথাপি যে অভ্যাস অন্যের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বা সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করে, সেক্ষেত্রে প্রশাসনের ন্যূনতম হস্তক্ষেপ অত্যন্ত যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয়। বিগত সময়ে স্যার এ.এফ. রহমান হলে এ বিষয়ে কিছু অলিখিত নিয়ম প্রযোজ্য ছিল। এখন সময় এসেছে সেই নিয়মগুলোকে লিখিত আকারে প্রণয়ন ও বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সহনশীল আবাসিক পরিবেশ নিশ্চিত করার।’এর আগে, চলতি বছরের জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ.এফ. রহমান হলে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিলেন হলটির প্রাধ্যক্ষ কাজী মাহফুজুল হক সুপণ। হলে প্রকাশ্যে ধূমপান করলে ২০০ টাকা জরিমানা এবং ইয়াবা, গাঁজা বা অন্য কোনো মাদক সেবনের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। এআই

রুয়া নির্বাচনে ২৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুয়া) নির্বাচনে ২৭ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. রফিকুল ইসলাম খান এবং সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন প্রফেসর ড. মো. নিজাম উদ্দীন। কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পেয়েছেন জে এ এম সকিলউর রহমান। সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ অন্যান্য পদেও অনেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে আছেন সহসভাপতি সাবরীনা শারমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংরক্ষিত মহিলা) ড. মোছা. ইসমত আরা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইমাজ উদ্দিন, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কবির উদ্দীন, শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক ড. মো. নাসির উদ্দিন, যুগ্ম শিক্ষা ও পাঠাগার সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, যুগ্ম তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. মো. নূরুল ইসলাম, যুগ্ম সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক আবু সালেহ মো. আব্দুল্লাহ, যুগ্ম প্রচার, প্রকাশনা ও জনসংযোগ সম্পাদক মোহা. আশরাফুল আলম ইমন, যুগ্ম ক্রীড়া সম্পাদক রুকন উদ্দিন মো. রওশন জামির খান, দপ্তর সম্পাদক কাজী মামুন রানা, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মো. মোজাহিদ হাসান, আইটি সম্পাদক মো. মাসুদ রানা, যুগ্ম আইটি সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান মুন্না, আইন সম্পাদক মুহম্মদ শাহাদাৎ হোসাইন, মুখ্য কল্যাণ ও উন্নয়ন সম্পাদক সাব্বির আহমেদ তাফসীর, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ. বি. এম. কামরুজ্জামান এবং যুগ্ম আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. ফরহাদ আলম।এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাহী সদস্য হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোছা. ফাতিমা খাতুন, মোসা. সখিনা খাতুন, ড. সিরাজুম মুনীরা, শাহানারা বেগম ও শারমিন আকতার।অন্যদিকে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেছেন জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী কয়েকজন জীবন সদস্য। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর একটি কার্যকর রুয়া হতে যাচ্ছে। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হচ্ছে। যারা নির্বাচন বর্জন করেছেন, তারা অংশ নিলে বিষয়টি আরও ভালো হতো। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে রুয়াকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যাশা করছি।’সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা অপবাদ। নির্বাচনে বিন্দুমাত্র সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি। যারা অভিযোগ তুলছেন, তারা প্রমাণ করুক কোথায় লঙ্ঘন হয়েছে।’আরডি

আইন নয়, লাগবে আত্মশুদ্ধি: আইন উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘মানবাধিকারকে একটি সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটা শুধু আইন দিয়ে হবে না। সবার উপলব্ধি লাগবে, আত্মশুদ্ধি লাগবে। আমাদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছতা লাগবে। আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। এগুলোর সঙ্গে যখন আমরা আইনগত পরিবর্তন করব, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন আনব, তখন সত্যিকারের পরিবর্তন আসতে পারে।’শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘১১তম মানবাধিকার সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে আগে ঠিক করা দরকার রাষ্ট্রের প্রধান তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ। আগে এই তিনটি অঙ্গের সমস্যা সমাধান করতে হবে। এখানে সমস্যা রেখে তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশন গঠন করে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে আসলে কোনো লাভ হবে না। আসল জায়গায় হাত দিতে হয়।’মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকে মনে করে, মানবাধিকার ইউরোপ-আমেরিকায় বাস্তবায়িত হয়েছে। তারা তাদের দেশের ভেতরে এটি করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা সারা পৃথিবীতে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কাজে নিয়োজিত আছে। এটা আপনারা ভালো করেই জানেন—কীভাবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়, অস্ত্র বিক্রি করে, অত্যাচারী শাসকদের সমর্থন করে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। এটি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’উপদেষ্টা বলেন, ‘ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার ভয়টা চলে গেলে সরকার কীভাবে দানবে পরিণত হয়, সেটা আমরা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমল থেকে বুঝতে পারি। যার কারণে আমাদের এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন। কত কঠিন, ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের—তা উপলব্ধি করে আমাদের সামগ্রিকভাবে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী থাকব, কিন্তু যেন ইউটোপিয়ান না হয়ে যাই।’সেমিনারে ঢাবির আইন অনুষদের ডিন ড. মুহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘কাগজে অনেক কথা লেখা থাকে। আমরা চাই সেসবের যথাযথ বাস্তবায়ন। মানবাধিকার যদি লঙ্ঘন হয় তাহলে বিচার হবে আদালতে। কিন্তু আদালতকে যদি ফ্যাসিবাদের একটি অংশে পরিণত করা হয়, তাহলে সংবিধানে যতই ভালো কথা লেখা থাকুক, তা কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।’তিনি আরও বলেন, ‘মানবাধিকার প্রয়োগের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। তাদের বলতে হবে- আমি কোনো দলের দাস হয়ে কাজ করব না, আমি আইন অনুযায়ী চলব।’তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর দেশের সামনে বিরল এক গতি এসেছে। এখন সময় এসেছে দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও সংস্কার আনার। এর মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।’এ সময় সেমিনারে আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া আহমেদ বিন কাশেম ও মাইকেল চাকমা, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত দুইজন ‘জুলাইযোদ্ধা’ এবং অভ্যুত্থানে শহীদ নাইমা সুলতানা ও শহীদ শাহরিয়ার খানের মা বক্তব্য প্রদান করেন।শহীদ শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, ‘আমরা এমন রাষ্ট্রে বাস করি যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি আমার সন্তানের বুকে বিদ্ধ হয়েছে, আমার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী আমার সন্তানের ঘাতক। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তান রাজপথে নেমেছিল, আর সেখানেও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন দেশ হয়তো আর নেই যেখানে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিজ দেশের সাধারণ মানুষের ঘাতক হয়ে ওঠে।’সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে আগত অতিথিরা মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে জয়ী দশজন বিজয়ীকে ব্যাগ, সম্মান স্মারক, সনদ ও সম্মাননা অর্থ প্রদান করেন।আরডি 

‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক’ নামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা ও ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (ইউটিএল) নামে শিক্ষকদের নতুন একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইউটিএল’র মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- জ্ঞান, বিশ্বাস, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা। রাজনৈতিক আনুগত্যের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে শিক্ষা, গবেষণা, আত্মমর্যাদা, চিন্তার স্বাধীনতা ও জাতীয় দায়িত্ববোধকে এগিয়ে নেওয়াই হবে এই সংগঠনটির অন্যতম উদ্দেশ্য বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাসকে আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনকে সদস্য সচিব করে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।এ সময় অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে যে বিপ্লবের আকাঙক্ষা তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশের জাতীয় চেতনায় এক নতুন জাগরণ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক ও আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিকে এই বিপ্লব পুনর্নির্মাণ করছে।তিনি বলেন, এ প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে একটি পেশাদার শিক্ষক সংগঠনের; যা শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা, একাডেমিক সততা, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও গবেষণায় উৎকর্ষতা সাধন এবং গঠনমূলক সম্পৃক্ততা ও নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ইউটিএল এ প্রয়োজন থেকেই জন্ম নেওয়া শিক্ষকগণের একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম। এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো রাজনৈতিক আনুগত্যের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে শিক্ষা, গবেষণা, আত্মমর্যাদা, চিন্তার স্বাধীনতা ও জাতীয় দায়িত্ববোধকে এগিয়ে নেওয়া। শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, ইউটিএল কেবল একটি প্ল্যাটফর্ম নয়—এটি একটি আন্দোলন বটে। যে সকল শিক্ষক বিশ্বাস করেন যে, শিক্ষকগণ জাতির উচ্চতর আকাঙ্ক্ষা পূরণে পথপ্রদর্শক; আর শিক্ষা সমাজকে ন্যায়, জ্ঞান ও নৈতিকতার পথে নিয়ে যেতে পারে—ইউটিএল তাদেরই প্ল্যাটফর্ম। আসুন, আমরা গড়ে তুলি একটি পেশাদার, নৈতিক ও জাতীয়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শিক্ষকসমাজ।সংগঠনের মিশন হবে দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষক সংগঠন গড়ে তোলা; শিক্ষকগণের একাডেমিক, পেশাগত স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়ন; শিক্ষা ও জাতীয় নীতিনির্ধারণে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা; একাডেমিয়াকে মুক্ত, নৈতিক ও গঠনমূলক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা; সর্বপরি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবান্ধব ও নিরাপদ ক্যাম্পাস তৈরিতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখা।লিখিত বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়। এই সময় শহীদ পরিবারের সদস্যগণ এবং উপস্থিত পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মতামত পেশ করেন। পরিশেষে নবগঠিত কমিটির আহবায়ক উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

নবীনতর পূর্বতন