নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের ঘটনা থেকে যবিপ্রবিতে সংঘর্ষ, আটক ১

নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্তের ঘটনা থেকে যবিপ্রবিতে সংঘর্ষ, আটক ১

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন সাংবাদিক সহ ২৭ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটস্থ আমবটতলা বাজার নামক স্থানে এ সংঘর্ষের ঘটনা শুরু হয়। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম আর খান মেডিকেল সেন্টারেসহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর সদর হাসপাতাল ও চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরবর্তীতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে অভিযুক্ত সেই ইভটিজারকে আটক করে পুলিশ।

ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বর রাত ৮টায় আমি ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কাজ করার জন্য আমবটতলার ইলেকট্রনিক্স দোকানে যাই। সেই দোকানে ইলেকট্রিক ওয়্যার খুলতে গিয়ে ভুলবশত আমার হাত হালকা কেটে যায়। তখন দোকানদার আমার হাত জোরপূর্বক টেনে নেয় এবং ঔষধ লাগানোর চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, ‘এরপর আমি আমার কাজ শেষ করে দ্রুত বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তখন সে আমার ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন করে এবং অশালীন কথাবার্তা শুরু করে। এসব কথা শোনার পর আমি রেগে গেলে তা দেখে সে আরও বিদ্রুপ করতে থাকে।’

তার ভাষ্যমতে, আমি সেখান থেকে দ্রুত টাকা দিয়ে বের হয়ে যেতে চাইলে সে বলে— ‘টাকা দিতে হবে না, আপনি আরও ব্যাটারি নিয়ে আসেন, আমার সামনে বসে ব্যাটারি খুলেন, আমি দেখি। আমি আপনাকে আমার পকেট থেকে টাকা দিচ্ছি।’ আমি তার এই অশালীন কথা শুনে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলাম, তখন সে আমাকে অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে।

এ বিষয়ে কেমিকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, ‘আমাদের এক জুনিয়র ছাত্রীকে একজন দোকানদার অশালীন ভাষায় যৌন হয়রানি করেছে মর্মে জানতে পেরে আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তখন সে কেদেঁ দেয়।

আমরা তখন দোকানদরকে অনুরোধ করি আমাদের ভুক্তভোগীর কাছে ক্ষমা চাইতে। কিন্তু ক্ষমা চাওয়ার বদলে তিনি বাজার কমিটির কয়েকজনকে ডেকে আমাদের মারধর করে। এতে আমি, আমার জুনিয়র ও ব্যাচমেট সবাই আহত হই।

কোনোভাবে আমরা সেখান থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে বিষয়টি প্রক্টর এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালককে ফোন করে জানাই। তবে কোনো সহায়তা পাইনি।’

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংবাদ সংগ্রহের সময় ছোড়া ইটপাটকেলে আহত হন ডেইলি ক্যাম্পাসের সাংবাদিক জহুরুল ইসলাম ও রাইজিং বিডির সাংবাদিক ইমদাদুল ইসলাম। এছাড়াও সাংবাদিকদের ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে উত্তেজিত জনতা, একপর্যায়ে সাব্বির হোসেন নামের আরেক সাংবাদিকের সাইকেল ভেঙ্গে পুড়িয়ে দেয় তারা।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি চেষ্টা করলেও তারা ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে এ সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করে। সংঘর্ষের তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। পরবর্তীতে রাত ৯ টার পরে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এরপর আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ আরও অনেকে। সেসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সময়মতো ঘটনাস্থলে উপস্থিত করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে প্রক্টর ড. মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ‘এক ছাত্রীকে ইভটিজিং করাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে। আমাদের প্রক্টরিয়াল বডিসহ অনেক শিক্ষক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি, কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আসতে দেরি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। সংঘর্ষে আমাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীদের একাংশ ভিসি স্যারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। ভিসি স্যারের নিকট শিক্ষার্থীরা ৬টি দাবি তুলে ধরেন। পরবর্তীতে সবগুলো দাবি পূরণের আশ্বাস দেন এবং আসামিকে গ্রেফতার করা নিশ্চিত করেন।’

ঘটনা প্রসঙ্গে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘ঘটনাটি আমি সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে জানতে পারি। জানার সাথে সাথে আমি এসপি, জিওসি, র‍্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা বিষয়টি শোনেন ঠিকই, কিন্তু আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক সহযোগিতা পাইনি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজার কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসবো, যাতে এমন বিরূপ আচরণের পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।’

নবীনতর পূর্বতন