‘ভুলেই গেছিস। আজকাল একটা ফোনও করিস না।’
হুটহাট দেখা হলে, কথা হলে পরস্পরের প্রতি ধেয়ে আসে এই অভিযোগ বাক্য। জবাবে বন্ধুর মুখে শুকনা হাসি, বিব্রত ভাব কিংবা ব্যস্ততার অজুহাত। তাতে অভিমানে প্রলেপ পড়ে বটে; কিন্তু যোগাযোগহীনতার অভিমান মরে না। অবশ্য বন্ধুত্বে এসব অভিযোগ-অভিমান বড় একটা পাত্তা পায় না। সাক্ষাতের উচ্ছ্বাস কিংবা বন্ধুর কণ্ঠস্বর শোনার আনন্দে ঢাকা পড়ে যায় সব; বরং কবীর সুমনের গানের কলির মতো বেরিয়ে আসে—‘বন্ধু কী খবর বল?’
বন্ধুত্ব ব্যাপারটাই তো এমন। ব্যক্তিজীবনের ব্যস্ততা বাড়বে। দেখা হবে না, কথা হবে না বহুদিন; কিন্তু হৃদয়ের টান থাকবে অমলিন। ফের দেখা হলে মুখভরা হাসি। অনিঃশেষ কথার তুবড়ি।
সন্দেহ নেই, আধুনিক প্রযুক্তি বন্ধুত্বের মতো সম্পর্কে বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে। ভারী হচ্ছে বন্ধুর সংখ্যা। বন্ধুর তালিকায় নিত্যনতুন যুক্ত হচ্ছে নানা রকম মানুষ; কিন্তু বন্ধুত্বের সেই যে আটপৌরে রসায়ন, তাতে যেন প্রাণ নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্স ভরে ওঠে বন্ধুদের নানা কথায়। কোনো না কোনো বন্ধুর সঙ্গে প্রতিদিনই টুকটাক চলতে থাকে কথাবার্তা। তাতে অনুভূতির বিনিময় হয় ঠিকই, তবে শ্রবণের সুখ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ইনবক্সে চটজলদি খুদে বার্তা লিখে বন্ধুকে নিজের অনুভূতি বোঝানোর সঙ্গে সরাসরি ফোনকলে কথা বলে ভাববিনিময়ের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বন্ধুর কণ্ঠস্বর যেন অব্যর্থ ওষুধ। বন্ধুর সঙ্গে একটু কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়। বেদনা প্রতিস্থাপিত হয় আনন্দে। সিদ্ধান্তহীনতাগুলো খুঁজে পায় গতিপথ।
আজ ২৮ ডিসেম্বর, বন্ধুকে ফোন করা দিবস। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যোগাযোগের গুরুত্ব তুলে ধরতে বড়দিন ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষের মাঝের একটি দিন বেছে নেওয়া হয়েছে। কবে কীভাবে দিবসটির চল হয়েছে, স্পষ্ট করে জানা যায় না। তবে একাধিক সূত্র মতে, ২০১৯ সাল থেকে এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন কথা হয়নি, আজ তাঁদের ফোন দিতে পারেন। পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে গ্রুপ কলে কথা বলতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে আয়োজন করতে পারেন জমজমাট আড্ডা।