নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ


নোবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ 
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) হলের সীট নিয়ে ছাত্রদল সভাপতি পরিচয়ে শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের দোসর আক্ষা দিয়ে এই অভিযোগ তোলেন নোবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান। 

শুক্রবার (২০ মার্চ) সাংবাদিকদের পাঠানো এক বিবৃতির মাধ্যমে এই পাল্টা অভিযোগ তোলেন তিনি। 

জাহিদ হাসান বলেন, সম্প্রতি নোবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মী শিশির পন্ডিতের মিথ্যা অভিযোগের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম "ছাত্রদল সভাপতি পরিচয়ে নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ" শিরোনামে আমাকে জড়িয়ে যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী একজন চাকুরীজীবি উল্লেখ করে ছাত্রদল নেতা জাহিদ বলেন, শিশির পন্ডিত চাকুরিজীবী হয়ে সীট নিয়ে নির্ধারিত সময়ের আরও অনেক পরে নিজে না উঠে অন্য একজনকে তুলতে গিয়েছিল। ঐ রুমের বাসিন্দারা আমাকে জানিয়েছিল, তাদের মাধ্যমেই ফোনে তার সাথে আমার কথা হয়। আমি বিনয়ের সাথেই বলেছিলাম বিশৃঙ্খলা না করে সবাইকে নিয়ে প্রভোস্টের কাছে যেতে। প্রভোস্ট যেই সিদ্ধান্ত দিবে সবাই যেন তা মেনে নেয় সেই অনুরোধটুকুই আমি করেছিলাম। আমি একথাও বলেছিলাম, বৈধভাবে যার নামে সিট সেই উক্ত সিটে থাকবে, যদি শিশির পন্ডিতের নামে সিট থাকে তাহলে অবশ্যই শিশির পন্ডিত থাকবে এবং হল প্রশাসন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে। এবং তাকে আমি সভাপতি পরিচয় দিয়েও কোন কথা বলিনি। যদি এরকম হয়, তাহলে যার প্রয়োজন নাই, সেও সীট বরাদ্দ নিয়ে অন্যের কাছে ভাড়া দিবে। কেউ কেউ বিভিন্ন লবিং তদবির করে সিট মেনেজ করে নিজেদের লোক তুলে দিয়ে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে। অর্থাৎ ধীরে ধীরে হল পূর্বের ন্যায় অপশক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে,যা আমরা কখনো চাইনা। আমরা চাই সবকিছু হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে থাকুক। 

এ নিয়ে হল প্রশাসন বরাবর অভিযোগকারী নোবিপ্রবি শিক্ষা প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী শিশির পন্ডিত বলেন, ছাত্রদল নেতা জাহিদ হাসান ছাত্রদল সভাপতি পরিচয় দিয়ে আমার ৪২৪ নম্বর রুমের সীটের ব্যাপারে কথা বলেন। কিন্তু তিনি ওই রুমের সাথে কোনো ভাবেই সংশ্লিষ্ট না। তিনি আমাকে জানান যে আমি রুমে উঠতে পারবো না এবং হল প্রশাসন আমার সীট বাতিল করেছে।পরবর্তীতে আমি জানতে পারি হল প্রশাসন এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমন দোদুল্যমান অবস্থায় ৩/৪ দিন আমি তোষক নিয়ে ঘুরাঘুরি করি। এভাবে আমি হয়রানির স্বীকার হই। এরপরও আমাকে ৩০৫ নাম্বার রুমে ছাত্রদলের পরিচয়ে জেরা করা হয়। আমার বরাদ্দকৃত সীটে আমার ফ্রেন্ড থাকলে আমাকে সীট দখলের দোষ দেওয়া হয়। 

চাকুরীজীবির অভিযোগের বিষয়ে শিশির পন্ডিত বলেন, ছাত্রদল নেতা জাহিদের কর্তৃক আমাকে কর্মজীবী আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি চাকুরীজীবী সেক্ষেত্রে আমি আমার অভিযোগ পত্র প্রত্যাহার করবো এবং জনসম্মুখে ক্ষমা চাইবো। তবে প্রমাণ করতে না পারলে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। 

ছাত্রলীগে সংশিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত পনের বছরে আমরা যারা হলে থেকেছি তারা বাধ্য হয়েই ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামাদিতে যেতে হয়েছে। বিগত জুলাই আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণের কারণে ছাত্রলীগের হল সভাপতি আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। সুতরাং ২/১ টা ছবি দিয়ে জাজমেন্ট করা যায় না। এমন হলে আমিও বলতে পারি ছাত্রদল নেতা জাহিদ ভাইয়েরও এমন অনেক ছবি আছে যেখানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগামে উনি গিয়েছিলেন, এমনকি উনি টুঙ্গিপাড়াও গিয়েছেন। আমিতো ওনাকে ছাত্রলীগ বলছি না। আর আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আমি এব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি"। 

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি ছাত্রদল বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। বিবৃতিতে তারা জানান, নোবিপ্রবি ছাত্রদল হলের সিট দখল বা শিক্ষার্থী হয়রানির মতো কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং এগুলো সমর্থন করে না। অভিযুক্ত জাহিদ হাসান নোবিপ্রবি ছাত্রদলের কোনো পদধারী নেতা নয়। তার কোনো অপরাধের দায় নোবিপ্রবি ছাত্রদল নিবেনা। এ বিষয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা। কেউ যদি নোবিপ্রবি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে কোনো অপকর্ম করে তার বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নোবিপ্রবি প্রশাসনের নিকট দাবি জানাচ্ছি। নোবিপ্রবি ছাত্রদল শিক্ষার্থীবান্ধব ইতিবাচক ছাত্ররাজনীতি পক্ষে আছে এবং সবসময় থাকবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি কোষাধ্যক্ষ এবং ভাষা শহীদ আব্দুস সালাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ মুরাদ বলেন, নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে দলীয় পরিচয়ে কাউকে হয়রানি করার কোনো সুযোগ নেয়। হলের সীটের ব্যাপারে প্রভোস্ট বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর কেউ নিজের সীটে উঠতে না পারলে তার সীট অটোমেটিক বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তী মেরিট পজিশন থেকে সীট দেওয়া হবে। 

ছাত্রদল নেতাকে মৌখিক কোনো সীট দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মৌখিকভাবে কোনো সীট দেওয়া যায় না। হলের সীট নির্দিষ্ট প্রসিডিওর অনুসরণ করেই দেওয়া হয়। হলের সীট কেন্দ্রিক কোনো অভিযোগ হলে সেটা হল প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এছাড়া দলীয় পরিচয়ে হয়রানি করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আছে তারা দেখবে।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.