ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) প্রতিষ্ঠার চার দশক পরও নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নারী শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন, যা তাদের শিক্ষাজীবনকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আবাসন সংকট, সন্ধ্যা আইন, ইভটিজিং, ক্যাম্পাসে ওয়াশরুমে স্যানিটারি ন্যাপকিনের অভাব এবং বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রের অনুপস্থিতির মতো সমস্যায় ভুগছেন। এ সংকট নিরসনে প্রশাসনের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই বলে অভিযোগ তাদের।
বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পিয়াশা আক্তার আম্বিয়া বলেন, "নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট খুবই প্রকট। যে হলগুলো রয়েছে, সেগুলোর অবকাঠামোগত অবস্থাও খুবই নাজুক। ছেলেদের হল সারারাত খোলা থাকলেও আমাদের হলে সন্ধ্যার পর সন্ধ্যা আইন কার্যকর হয়। এটি স্পষ্ট বৈষম্য এবং অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন। প্রশাসনকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাফেরার স্বাধীনতা খর্ব করা ঠিক নয়।"
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সিনথিয়া ছোয়া বলেন, "নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি বৈষম্যের তালিকা দীর্ঘ। ক্যাম্পাসে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন অনেকেই, কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।" তিনি আরও যোগ করেন, "ছেলেদের হলে রাতভর যাতায়াত স্বাভাবিক, অথচ মেয়েদের হলে সন্ধ্যার পর প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। এটি স্পষ্ট বৈষম্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।"
মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস নেটওয়ার্ক’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাহাত আব্দুল্লাহ বলেন, "লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। ইতোমধ্যে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংকট নিরসনে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে জনমত গঠনের মাধ্যমে নারীদের অধিকার রক্ষায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, "নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কাজ করছে। তাদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়েও প্রশাসন চিন্তাভাবনা করছে।"
উল্লেখ্য, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের প্রতিবাদে এবং ন্যায়সংগত দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন নারী শ্রমিকেরা। এই শ্রম আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পথপরিক্রমায় চালু হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। গত শতকের সত্তরের দশকের মাঝামাঝি দিবসটি জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বব্যাপী পালিত হতে শুরু করে।