জুলাই আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে বেরোবিতে ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা


ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, বেরোবি:
গত বছরের জুলাইয়ে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ছাত্রলীগ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ ১৭১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

বুধবার (৮ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর রশিদ বাদী হয়ে রংপুরের তাজহাট থানায় এই মামলা করেন। মামলাটি বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় ৭১ জনের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগের ৩৬ জন নেতা-কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক, ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আটজন পুলিশ সদস্য ও ১২ জন বহিরাগত।

ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন শাখা সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম, যুগ্ম সম্পাদক মাসুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, সহসভাপতি বিধান বর্মণ, গ্লোরিয়াস ফজলে রাব্বী, তানভির আহমেদ প্রমুখ।

শিক্ষকদের মধ্যে আছেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সহকারী রেজিস্ট্রার হাফিজুর রহমান তুফান, সেকশন অফিসার মনিরুজ্জামান পলাশ, প্রক্টর অফিসের রাফিউল হাসান রাসেল, নিরাপত্তা কর্মী নুর আলমসহ আরও অনেকে।
অভিযুক্তদের তালিকায় আরও রয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীসহ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তা ও সদস্যরা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ সংঘটিত করেন। ১১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ১৬ জুলাই পুলিশ ও বহিরাগত অজ্ঞাতনামা ৮০ থেকে ১০০ জন আসামি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, লাঠিসোঁটা, রড, ছুরি, রামদা, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা করেন। পুলিশও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে। 

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা কেবল নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে এক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এতে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও জীবননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে।

ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেছে। দায়েরকৃত মামলায় দণ্ডবিধির ১৪৩/১৪৭/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারার পাশাপাশি ৩ক বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতি নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন অর রশীদ বলেন গণমাধ্যমকে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং উপাচার্যের অনুমতিক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছি। ঘটনার সময় আরো অনেকেই জড়িত ছিলেন। তাই মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরো ৮০ থেকে ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে, মামলার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোকতারুল ইসলামকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস এই মোসাদ্দেক। 

নবীনতর পূর্বতন