বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীরা কৃষিবিদদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ এবং ছয় দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।
মঙ্গলবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছয় দফা দাবির পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্বারের মোড় এলাকায় গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ অবরোধ করেন।
প্রায় দুই ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্সের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থীরা বেলা ১২টা ১০ মিনিটে অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এর ফলে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
এরপর দুপুর সোয়া দুইটায় বাকৃবি উপাচার্য এবং বিকেল চারটায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিটি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
বাকৃবির কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী ইফরান ইউসুফ শিহাব বলেন, "মেধা দিয়ে গড়ি দেশ, মেধাই হোক আমার অহংকার। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হলে আপনাদের অনেক গুলো ফ্লো মেইনটেইন করে আসতে হয়, এসএসসি, এইচএসসি তারপর ভর্তি যুদ্ধ। চান্স পেলে, টপ করলে আপনি কৃষির মত একটি সাবজেক্ট নিয়ে পড়তে পারবেন। পরিসংখ্যান মতে, একটি আসনের জন্য ২৩-২৪ সেশনে ২৪ জন ভর্তিচ্ছু লড়াই করেছে। তাহলে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা কিভাবে অযৌক্তিক দাবি নিয়ে কৃষি সেক্টরকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন তা আমার বুঝে আসে না।"
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই-আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিলো কোটা ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ। সেই ভিত্তিকেই অবলম্বন করে আমরা সকল পদে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ চাই এবং কে বা কার ইন্ধনে, তারা কৃষি সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তুলছে তা খতিয়ে দেখে তাদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের পেশ করা ছয় দফা দাবি সমূহ হলো-
১. ডিএই, বিএডিসি সহ অন্যান্য সব গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেড (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ উপসহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
২. ডিএই ও অন্যান্য কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ৯ম ও অন্যান্য গ্রেডে নিয়মিত Re visit ও পদবৃদ্ধি করতে হবে।
৩. নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যতীত ৯ম গ্রেডে (বিএডিসি এর কোটা বাতিল) পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে ১০ম গ্রেডের পোস্টসমূহ গেজেটের আওতার বাইরে স্বতন্ত্র পদসোপান / প্রচলিত কাঠামো রাখতে হবে।
৪. কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমাধারীদের জন্য নতুন কোন বিশেষায়িত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
৫. কৃষি/কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ক স্নাতক ব্যতীত নামের সাথে "কৃষিবিদ" পদবী ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৬. কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান (ডিএই) এর অধীনেই রাখতে হবে।
এসময় ময়মনসিংহ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আপনাদের যৌক্তিক দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা প্রশাসন আমরা একমত। দাবি আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে আমাদের আলোচনা করতে হবে। আপনারা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারেন। আমরা সেটা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ফরোয়ার্ড করে দিব। যারা এসব বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত না, নিম্ন আয়ের মানুষ আছেন, জরুরি কাজে ঢাকা যাবেন, তাদের জন্য আমরা জনদুর্ভোগ না করি।"
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আলীম বলেন, "এই মুহূর্তে তোমাদের একটি শক্তিশালী লিয়াজু কমিটি দরকার, ঢাকাতে যারা আছে তোমরা তাদের সাথে সমন্বয় কর। নির্দিষ্ট দাবি এবং শক্তিশালী কমিটি নিয়ে আগামী বুধ এবং বৃহস্পতিবার ঢাকা যেতে পারো। ভার্সিটিতে পড়া গ্রাজুয়েট এবং ডিপ্লোমাধারীদের তুলনা সেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।"
উল্লেখ্য, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৭৪ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে সহকারি কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় আজকে বাকৃবিতে কৃষি অনুষদের সকল ক্লাস বর্জন করা হয়েছে এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ প্রায় দুই ঘণ্টার জন্য অবরোধ করা হয়।