কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রদল কর্মীদের মিটিংয়ে না যাওয়ায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আরেক ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রদল কর্মী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুল্লাহ আল মামুনের অনুসারী বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কাউসার গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী। মারধরকারী ছাত্রদল কর্মী তৌহিদুল ইসলাম। গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১১টায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১০০৪ নং রুমে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে হল প্রভোস্টের কাছে মৌখিকভাবে বিচারও চেয়েছেন ভুক্তভোগী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদল কীভাবে কাজ করবে তা নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করার জন্য হলের ৪০০৪ নাম্বার কক্ষে মিটিং ডাকেন আহবায়ক মামুনের অনুসারী ছাত্রদল কর্মী মাজাহারুল ইসলাম আবির ও মাহদুজ্জামান ইপেল। এসময় ১৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ডাক দেওয়ার দায়িত্ব পান অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল মাহমুদ নিবির ও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম।
পরে তৌহিদ কাউসারকে মিটিংয়ের যাওয়ার জন্য জোর করলে তিনি মিটিংয়ে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এসময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে তৌহিদ কাউসারের মশারি ছিঁড়ে ফেলেন এবং কাঠ কাঠ ছুঁড়ে মারেন। ঘটনাস্থলে ছাত্রদল কর্মী তোফায়েল মাহমুদ নিবির উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী কাউসার বলেন, ‘তখন রাত ১১ টায় আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। এসময় তৌহিদ আমাকে মিটিংয়ে যাওয়ার কথা বললে আমি ঘুমিয়ে যাবো বলে যেতে অস্বীকৃতি জানাই। কিন্তু সে কিছুতেই শুনছে না এবং আমাকে বার বার ফোর্স করছে। এক পর্যায়ে আমার মশারি টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং গালিগালাজ শুরু করে। তখন আমি ধাক্কা দিয়ে বলি চলে যেতে। কিছুক্ষণ পর এসে কাঠের তক্তা দিয়ে মাথা বরাবর পাঁচ-ছয় বার আঘাত করে। তখন আমি হাত দিয়ে কোন রকম নিজেকে রক্ষা করি।’
এদিকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী মোহাম্মদ তাওহীদুল ইসলাম জানান, ‘১৭ তম আমরা সবাই মিলে বসব, কথাবার্তা বলব এজন্য আমি তাকে ডাকতে যাই রুমে। রুমে গিয়ে দেখি সে মশারির ভিতরে শুয়ে আছে। আমি ডাকলেও সে উঠেনি। তারপর আমি তার মশারী উঠালে সে আমাকে ধাক্কা দেয়। তখন আমি তাকে গাছের তক্তা দিয়ে তিন-চারটা বারি দিই।’
এছাড়াও ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে বলেও জানান তিনি। মিটিং ডাকার বিষয়ে মাহাদুজ্জামান ইপেল জানান, আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম তবে এখন ছাত্রদল করি। এটা সঠিক। তবে ছাত্রদলের হয়ে মিটিং করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে মারধরের বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের কোনো মতবিনিময় সভা ছিল না। যারা মারামারি করেছে তারা কেউ আমার অনুসারী নই। অনুসারী না হলে তাদের নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যান কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের সাথে অনেকেই ভ্রমণ করতে গিয়েছে। আসলে তারা কারা আমি জেনে আপনাকে জানাবো।
এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক মো. জিয়া উদ্দিন জানান, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। তাঁদের কে ডাকা হয়েছে। সবার সাথে কথা বলা হচ্ছে। ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করে হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবে।’