প্রতি বোতল কোক জীবন থেকে কেড়ে নেয় ১২ মিনিট

প্রতি বোতল কোক জীবন থেকে কেড়ে নেয় ১২ মিনিট

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় কোক— শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রায় সবার কাছেই এটি সমান জনপ্রিয়। দিনের পর দিন এর জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে শত শত কোটি লিটার বোতল বা ক্যানজাত কোক বিক্রি হয়। তবে এই পানীয়টির প্রতি ভালোবাসার পেছনে থাকা অন্ধত্ব নিয়ে সম্প্রতি এক গবেষণা সবাইকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক লুইস আলবের্তো জামোরা ও তার নেতৃত্বাধীন গবেষক দল সম্প্রতি এক গবেষণা পরিচালনা করেছেন, যা মানুষের খাদ্যাভ্যাস এবং আয়ুষ্কালের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরেছে। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক এক বিজ্ঞান সাময়িকীতে। সেই গবেষণার তথ্য বলছে, প্রতিটি বোতল বা ক্যানজাত কোক মানুষের আয়ুষ্কাল থেকে অন্তত ১২ মিনিট সময় কেড়ে নেয়।

অধ্যাপক জামোরা এবং তার গবেষণা দল শুধু কোক নয়, এমন বেশ কিছু খাদ্যপণ্যের তালিকা তৈরি করেছেন, যেগুলো মানুষের আয়ুষ্কাল হ্রাস করে। তাদের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে সহজলভ্য ৫ হাজার ৮০০ টিরও বেশি খাদ্য ও পানীয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব খাদ্য ও পানীয়ের প্রভাব পর্যালোচনা করে তারা এমন একটি তালিকা প্রস্তুত করেন, যেখানে মানুষের আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেওয়া খাবারগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত ও অতিপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য মানুষের আয়ু হ্রাসের প্রধান কারণ। উদাহরণস্বরূপ, একটি হটডগ খেলে মানুষের আয়ুষ্কাল ৩৬ মিনিট কমে যায়। যদি এর সঙ্গে কোক পান করা হয়, তাহলে সেটি আরও ১২ মিনিট কমায়। এক টুকরো বেকন ৯ মিনিট এবং একটি চিজবার্গার ৯ মিনিট আয়ু হ্রাস করে।

বিশ্বখ্যাত ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, কিংবা বার্গার কিং-এর মতো ফাস্টফুড চেইনের বার্গার, পিৎজা, এবং হটডগের মতো সুস্বাদু খাবারগুলো মূলত অতিপ্রক্রিয়াজাত উপাদানে তৈরি। এসব খাবারে থাকা উচ্চ ক্যালরি, চিনি এবং লবণের মাত্রা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদে আয়ুষ্কাল হ্রাসে ভূমিকা রাখে।

তবে অধ্যাপক জামোরা এবং তার দল শুধু আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেওয়া খাবার নিয়েই কাজ করেননি। তারা আয়ুষ্কাল বাড়াতে সক্ষম খাবারের তালিকাও প্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় স্থান পেয়েছে শাকসবজি, ফলমূল, পিনাট বাটার, এবং ঘরে তৈরি জ্যাম বা জেলির স্যান্ডউইচ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা প্রতিদিন প্রক্রিয়াজাত বা গরুর মাংস খেতে অভ্যস্ত, তারা যদি প্রতিদিনের সংগ্রহ করা ক্যালরির মাত্র ১০ শতাংশ শাকসবজি বা ফলমূল থেকে গ্রহণ করেন, তাহলে তারা তাদের আয়ুষ্কালে অন্তত ৪৮ মিনিট যোগ করতে পারেন।

অধ্যাপক জামোরার সহকর্মী ড. অলিভার জোলিয়েট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষদের খাদ্যাভ্যাসের কারণেই দেশটি মানুষের আয়ুষ্কাল হ্রাসের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন যে পরিমাণ মাংস খাওয়া হয়, তার ৭৫ শতাংশই প্রক্রিয়াজাত বা অতিপ্রক্রিয়াজাত।

তিনি বলেন, “আমরা একটি ছোট পরিসরে এই গবেষণা পরিচালনা করেছি। বড় পরিসরে করলে হয়তো আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেত। তবে এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চেয়েছি। সেটি হলো, আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা ছাড়া সুস্থ থাকা এবং দীর্ঘ আয়ু পাওয়া সম্ভব নয়।”

কোক এবং অন্যান্য কোমল পানীয় শুধু আয়ুষ্কাল নয়, মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এই পানীয়গুলোতে থাকা উচ্চ মাত্রার চিনি এবং কৃত্রিম উপাদান শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিয়মিত কোক পানের ফলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্থূলতার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

কীভাবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনবেন?

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সুস্থ থাকতে চাইলে এবং আয়ুষ্কাল বাড়াতে চাইলে খাদ্যাভ্যাসে নিম্নলিখিত পরিবর্তন আনা জরুরি:
  • প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন: ফাস্টফুড এবং অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
  • শাকসবজি ও ফলমূল বাড়ান: প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি এবং ফলমূলের পরিমাণ বাড়ান।
  • কোমল পানীয়ের বিকল্প খুঁজুন: কোকের মতো পানীয়ের বদলে পানি, নারকেলের পানি বা তাজা ফলের রস গ্রহণ করুন।
  •  ঘরে তৈরি খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন: বাইরের খাবারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
নবীনতর পূর্বতন