বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঈদ : উৎসবের বৈচিত্র্য

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঈদ : উৎসবের বৈচিত্র্য

সংগীত কুমার
: ঈদ মুসলিমদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা সারা বিশ্বে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে উদযাপিত হয়। অঞ্চলভেদে ঈদের রীতিনীতিতে কিছু পার্থক্য থাকলেও মূল আনন্দের অনুভূতি সবার এক। চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনের বৈচিত্র্যময় ধরণ।  

মধ্যপ্রাচ্য: “ঐতিহ্যের সঙ্গে রাজকীয় আয়োজন”

সৌদি আরব: ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে বিশেষ দোয়া ও তাকবির ধ্বনি শোনা যায়। ঈদের সকালে নামাজ শেষে পরিবার-পরিজন মিষ্টিজাতীয় খাবার খায়, বিশেষ করে "কুনাফা" ও "মামুল" খুব জনপ্রিয়। ধনী পরিবারের অনেকে দরিদ্রদের জন্য বিশেষ দান করে, যা তাদের সংস্কৃতির অংশ।  

সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই, আবুধাবি): ঈদে বুর্জ খলিফাসহ বিভিন্ন স্থানে বিশাল আতশবাজির আয়োজন হয়। পরিবারগুলো নতুন পোশাক পরে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় যায় এবং উপহারের আদান-প্রদান করে। ঈদ উপলক্ষে বিশাল শপিং ডিসকাউন্ট ও বিশেষ অফার দেওয়া হয়।  

মিশর: ঈদুল ফিতরকে "সুইট ফেস্টিভ্যাল" বলা হয়, যেখানে নানা ধরণের মিষ্টান্ন যেমন "কাহক" (এক ধরনের বিস্কুট) খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। শিশুদের হাতে নতুন টাকা বা "ঈদিয়া" দেওয়া হয়, যা তাদের জন্য বিশেষ আনন্দের উৎস।  

দক্ষিণ এশিয়া: “ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রাণবন্ত উৎসব”

বাংলাদেশ: ঈদের নামাজের পর সেমাই, পায়েস, বিরিয়ানি, কোরমা ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়। ঈদ কার্ড, নতুন পোশাক, সালামি দেওয়া ও বেড়াতে যাওয়ার সংস্কৃতি প্রচলিত। গ্রামে ঈদের আনন্দ ভিন্ন মাত্রার হয়, যেখানে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করে।  

ভারত ও পাকিস্তান: ঈদের আগে চাঁদ রাত পালন করা হয়, যেখানে নারীরা মেহেদি লাগায় এবং বিশেষ কেনাকাটা করে। ঈদের দিনে লাচ্ছা সেমাই ও বিরিয়ানি অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। পাকিস্তানে "ঈদ মিলান পার্টি" নামে বড় পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়।  

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: “ঐতিহ্যবাহী ও উৎসবমুখর ঈদ”

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া: ঈদ এখানে "হারি রায়া আইদুল ফিতরি" নামে পরিচিত। মুসলিমরা নতুন পোশাক পরে "কেতুপাট" (এক ধরনের ভাঁজ করা চালের কেক) ও বিশেষ খাবার খায়। পরিবারের ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম জানায়, যা সম্মানের প্রতীক।  

ফিলিপাইন: ঈদের দিন "দাদুয়া" (বিশেষ মিষ্টান্ন) তৈরি করা হয়। মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে ধনীরা দরিদ্রদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করে।  

আফ্রিকা: “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে ঈদ উদযাপন”

নাইজেরিয়া: ঈদের দিন "রাম মিট ফিস্ট" নামে বিশাল ভোজ আয়োজন হয়, যেখানে বিভিন্ন মাংসের পদ পরিবেশন করা হয়। অনেক পরিবার ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ঈদগাহে যায় এবং ঈদ মিছিল করে।  

সুদান ও সোমালিয়া: এখানে ঈদ সাধারণত বড়সড় পারিবারিক পুনর্মিলনী হিসেবে উদযাপিত হয়। সুদানে "আসিদা" নামের একটি বিশেষ খাবার তৈরি করা হয়, যা ঈদের দিনে খুব জনপ্রিয়।  

ইউরোপ ও আমেরিকা: “অভিবাসীদের ঈদ উদযাপন”

যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স: ইউরোপে অভিবাসী মুসলিমরা মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ে, এরপর বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়। ফ্রান্সে "হালাল ঈদ ফেস্টিভ্যাল" নামে বিশেষ আয়োজন করা হয়, যেখানে নানা ধরনের হালাল খাবার ও পণ্য বিক্রি হয়।  

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা: মুসলিমরা ঈদ উদযাপনে বড় পার্ক বা মসজিদে সমবেত হয় এবং "ঈদ কার্নিভাল" আয়োজন করে। বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করে, যা ঈদের অন্যতম অংশ।  



বিশ্বব্যাপী ঈদের মূল দিকসমূহ


ঈদ নামাজ: সব দেশেই ঈদের দিনে বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়। 
 
ঈদ উপহার: বিভিন্ন দেশে "ঈদিয়া" বা উপহার দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। 

ঈদের খাবার: প্রত্যেক দেশে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করা হয়।  

সামাজিক ও দাতব্য কার্যক্রম: দরিদ্রদের সাহায্য করা ঈদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।  
 
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদ উদযাপনের রীতিনীতি ভিন্ন হলেও এর মূল চেতনা একই—ঈদ হলো একতার প্রতীক, যেখানে ভালোবাসা, দানশীলতা ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হয়। সংস্কৃতি ভেদে ঈদের উদযাপন ভিন্ন হতে পারে, তবে সবার জন্য এটি উৎসবের আনন্দ নিয়ে আসে।

Cookie Consent
We serve cookies on this site to optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.